পুরোনো খেলা বন্ধ না হলে আরেক গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিতে হবে : নাহিদ

| শনিবার , ১৯ জুলাই, ২০২৫ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

পুরোনো খেলা বন্ধ না হলে আরেক গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টিএনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, এই মাফিয়া সিস্টেমের সঙ্গে আমরা খেলব না, পুরোনো খেলায় অংশগ্রহণ করব না। পুরোনো খেলার বিরুদ্ধেই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, আমরা রক্ত দিয়েছি। ফলে খেলার নিয়ম বদলাইতে হবে। কিন্তু আমরা জানি, খেলার নিয়ম এখনও বদলায় নাই। নারায়ণগঞ্জে এখনও খেলা বন্ধ হয় নাই। খেলা বন্ধ না হলে আরেকটা গণঅভ্যুত্থানের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকালে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ শহরে পদযাত্রা শেষে চাষাঢ়া গোল চত্বরে পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।

জুলাইয়ে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম। এই রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। পুরোনো রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটা চরম উদাহরণ এই নারায়ণগঞ্জ শহর; যেখানে পরিবারতন্ত্র, মাফিয়াতন্ত্র, গডফাদারতন্ত্র সব মিলেমিশে একাকার। এই একই সিস্টেমে পুরা বাংলাদেশ এত বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। নারায়ণগঞ্জকে কিছু পরিবার বছরের পর বছর নিয়ন্ত্রণ করেছে। এই শহরের ব্যবসা, অর্থনীতি ও রাজনীতি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তারা দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কায়েম করেছে। সেইসঙ্গে হরণ করেছে জনগণের অধিকার, যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, নতুন বন্দোবস্তের যে আকাঙ্‌ক্ষা নিয়ে আমরা গণঅভ্যুত্থানে লড়াই করেছিলাম, সেই বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যেতে হবে। এই যুদ্ধ সেদিনই শেষ হবে যেদিন পুরোনো বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করব।

সকালে মুন্সীগঞ্জে পদযাত্রা শেষে দুপুরে নারায়ণগঞ্জে আসেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে দুপুরের খাবার শেষে নগরের নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অন্তত তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে চাষাঢ়ায় এসে থামেন। সেখানে সড়কের ওপর ট্রাক দিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ করা হয়।

পদযাত্রায়া নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলএনসিপিকে অনুপ্রাণিত করেছে বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম।

পদযাত্রার আগের রাতে আতঙ্ক তৈরি করতে নারায়ণগঞ্জ শহরে জুলাই পদযাত্রার একটি তোরণে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেইসঙ্গে জুলাইয়ের শহীদ ও বিচার চেয়ে মামলা করা পরিবারগুলো নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন বলেও অভিযোগ করেন এনসিপির এই আহ্বায়ক। গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জবাসীর ভূমিকার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

পথসভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, সন্ত্রাসী হামলা করে আমাদেরকে থামিয়ে রাখা যাবে না। আওয়ামী লীগকে ফেরানোর জন্য ভারতীয় শক্তিগুলো একযোগে মাঠে নেমেছে। কিন্তু আমরা আবারও রক্ত দিয়ে হলেও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আর কখনো ফিরে আসতে দেব না। কেয়ামত পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতির আর কোনো সুযোগ নাই। আওয়ামী লীগের আমলে বিতর্কিত নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল অংশগ্রহণ করায় তাদের গাদ্দার বলেও মন্তব্য করেন আখতার।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনায় কিছু বুদ্ধিজীবী খুনিদের পক্ষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমাদের মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে আসে। সুতরাং আপনাদের মতো সুশীলতা আমি দেখাতে পারি না। আপনাদের বুদ্ধিজীবীতা কোম্পানির কাছে, প্রশাসনের কাছে বর্গা দেওয়া। আমাদের জীবন জনগণের কাছে বর্গা। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উৎখাত হওয়া আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

পদযাত্রায় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী আহমেদুর রহমান তনু উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনে সমঝোতা স্মারক সই
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে প্রতীকী ম্যারাথন