পুরোদমে কাজ শুরু করেছে সিএমপি

সংবাদ সম্মেলনে এডিসি কাজী তারেক নগরে ১৫ দিনে ১৬২ মামলা, গ্রেপ্তার ৪৯৪

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৪ at ৪:২১ পূর্বাহ্ণ

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ছন্দ হারিয়ে ফেলা চট্টগ্রাম মহানগরী পুলিশ (সিএমপি) হারানো ছন্দ ফিরে পেতে শুরু করেছে। পুলিশ পুরোদমে কাজ শুরু করায় নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বেড়েছে পুলিশি অভিযানের সাফল্যও। সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের নেতৃত্বে ৬ সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য চাঙা মনোবল নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছে। পুরোদমে কাজ শুরুর বিষয়ে গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিভিন্ন অভিযানিক সাফল্যের কথা বলা হয়েছে। সিএমপির এডিসি (পিআর) কাজী তারেক আজিজ সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন। এই সময় সিএমপির সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সিএমপির থানাগুলোতে হামলা, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। সিএমপির ১৬টি থানার মধ্যে প্রায় ১০টি থানা পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। থানার অস্ত্রশস্ত্র এবং আসবাব থেকে শুরু করে নথিপত্র পর্যন্ত সবই জ্বালিয়ে কিংবা লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ মানুষের হামলায় আহত হন অনেক পুলিশ সদস্য। পুলিশ সদস্যরা থানা ছেড়ে চলে গেলে সবগুলো থানা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামে এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দেয়।

থানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। হামলা, লুটপাট, দখল এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী এবং আনসার সদস্যদের মাধ্যমে অরাজকতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পুলিশী কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পুলিশের নতুন আইজি সকলকে ধৈর্য ধরে স্ব স্ব ইউনিটে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু এতেও খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি।

অবশেষে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সরকারের গৃহিত বিভিন্ন উদ্যোগ, নতুন আইজিপি, নতুন পুলিশ কমিশনারের আহ্বানে পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিলেও ছন্দ হারিয়ে ফেলেন।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর পুলিশের নয়া আইজি ময়নুল ইসলাম চট্টগ্রাম সফরকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় পুলিশকে পুরোপুরি কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। উক্ত নির্দেশনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের নতুন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের নেতৃত্বে আভিযানিক কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করেছে সিএমপি। এরই প্রেক্ষিতে গত ১ অক্টোবর থেকে সিএমপির বিভিন্ন থানায় গতকাল ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১৬২টি মামলা রুজু হয়েছে। গত ১৫ দিনে ২৯৪ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ মোট আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৯৪ জন। গত ১৫ দিনে প্রায় ১৯ হাজার পিস ইয়াবা, ৫৮ কেজি গাঁজা ও ১০৩ বোতল ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক উদ্ধার হয়েছে। মাদক উদ্ধার সংক্রান্ত মামলা রুজু হয়েছে ২৬টি। গত কয়েকদিনে ২টি পিস্তলসহ ৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ ও থানা পুলিশ। সিএমপির বিভিন্ন থানা থেকে লুণ্ঠিত ৯৪৮টি অস্ত্রের মধ্যে ৭৮২টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

পুলিশ অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু করে। বহুল আলোচিত ‘গানের তালে পিটিয়ে হত্যা’র ঘটনায় পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে মূলহোতাসহ ৩ জন। বিভিন্ন হত্যা মামলার আসামিরাও গ্রেপ্তার হচ্ছে। সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ছিনতাই মামলা রুজু হওয়ার ৪ ঘণ্টার মধ্যেই নগদ টাকা ও মোবাইলসহ দুইজন আসামি। একই থানায় ৬ জন অজ্ঞাতনামা আসামি কর্তৃক রফিকুল হক (২৫) নামীয় একজন ব্যবসায়ী অপহরণের শিকার হলে থানা পুলিশের দ্রুত তৎপরতায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। পাহাড়তলী থানা গতকাল সাগরিকা মোড় থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ২টি কিরিচ, ২টি লোহার রড, ১টি চাপাতি ও মুখ বাঁধার কাজে ব্যবহৃত ২টি গামছাসহ। কোতোয়ালী থানা গতকাল গ্রেপ্তার করেছে বাসে চাপা দিয়ে একজন রিকশাচালককে হত্যার ঘটনার ক্লুলেস আসামিকে। কোতোয়ালী থানা ও হালিশহর থানায় লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সাথে সরাসরি জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা দুটি। কোতোয়ালী থানা কর্তৃক গ্রেপ্তার দুইজনের মধ্যে একজনের নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে থানার মামলার আলামত ১৪টি মোবাইল।

গতকাল বাকলিয়া থানা আটক করেছে ৩ জন মাদক ব্যবসায়ী। এর মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের ওপেন হাউজ ডেতে করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে। ৮ মামলার আসামি পেশাদার মাদকব্যবসায়ী মনির হোসেন প্রকাশ ক্যারমানকে ২১৪৫ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ।

পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে ওপেন হাউজ ডেতে সরাসরি অভিযোগ করতে করার সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী। যেকোনো অভিযোগ তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা করছেন সিএমপি কমিশনার। নগরীর নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমগ্র মহানগরে প্রায় একশত মোটরসাইকেল প্যাট্রোলিং করে যাচ্ছে। এই প্যাট্রোলসমূহ নগরীর আনাচেকানাচে অলিগলিতে নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে চলেছে। নগরীর প্রত্যেকটি থানাতে প্রতিদিন দুইবার করে শুরু হয়েছে তল্লাশি কার্যক্রম। জনগণের সাথে দূরত্ব ঘোচাতে কমিউনিটি পুলিশের পুরোনো সকল কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন করে কমিটি পুনর্গঠনের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই পুনর্গঠিত কমিটিতে ছাত্র প্রতিনিধিসহ সমাজের ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সমাজের সকল শ্রেণিপেশার, মতপথের প্রতিনিধি থাকবেন।

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ গত ১ মাসে সিএমপির চারটি ট্রাফিক বিভাগে ২৮৭৯টি মামলা প্রদানের মাধ্যমে জরিমানা সংগ্রহ করে প্রায় ৯০ লাখ টাকা। অভিযান শুরু হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অননুমোদিত, রুট পারমিটবিহীন ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি ও অন্যান্য যানবাহনের বিরুদ্ধে চলছে অভিযান। গত ১ মাসে ট্রাফিক বিভাগ ১৮৯৪টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৭৩০টি অনুমোদনবিহীন সিএনজি ও ১৭৯৮টি অন্যান্য গাড়ি আটক করে।

পুরোদমে কাজ শুরু করায় নগরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করে সিএমপির এডিসি (পিআর) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, আইনবিরোধী, নিরাপত্তাবিঘ্নকারী, সমাজের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো কিছুর বিরুদ্ধে সিএমপির এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭ মার্চ, ১৫ আগস্টসহ আট জাতীয় দিবস বাতিল
পরবর্তী নিবন্ধ১২ বিচারপতিকে পাঠানো হলো ছুটিতে, পাবেন না বেঞ্চ