চট্টগ্রামের অনেক নিদর্শনের মধ্যে একটি হচ্ছে পি কে সেন সাততলা। একসময় দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে সদরঘাটের পি কে সেন ভবনের চূড়া দেখে বুঝে নিত চট্টগ্রাম শহরে চলে এসেছে। কিন্তু এখন বড় বড় ইমারতের কাছে সেটা আজ অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে।
পিকে সেন সাততলা চট্টগ্রাম শহরে ব্যক্তি পর্যায়ে নির্মিত প্রথম দৃষ্টিনন্দন ভবন। একশত ২৬ বছর আগে কলকাতা থেকে সুদক্ষ কারিগর দ্বারা ভবনটি তৈরী করা হয়েছিল। বাইরে থেকে দেখতে উঁচু গম্ভুজের ভবনটি ভিতরে আরো চমৎকার। সাত তলা ভবনটির প্রথম চারতলা আবাসিক। পঞ্চমতলায় মন্দির, উপরে গম্ভুজের ভিতর খোলামেলা বৈঠকখানা ও চারিদিকে উন্মুক্ত বারান্দা। যেখান থেকে চমৎকার কর্ণফুলী নদীর দৃশ্য দেখা যেত। চারতলা পর্যন্ত ভবনের মাঝখান বরাবর দুইটি নান্দনিক সিড়ি দুইদিক থেকে নিচে নেমে এসেছে। ভবনের প্রতিটি কক্ষ নির্মাণ কৌশলের কারণে আলাদা করে সুন্দর। রাউজান নোয়াপাড়ার তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার প্রসন্ন কুমার সেন এ জায়গায় এসে দোকান গড়ে তোলেন, রাস্তাঘাট বানান। তাঁর মুদি দোকান, তেলের ঘানি, ট্যানার ব্যবসাসহ নানা ব্যবসা ছিল। সে সময় প্রায় দুই শতাধিক কর্মচারী তাঁর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করত। পি কে সেন কলকাতা থেকে ৫০–৬০ জন রাজমিস্ত্রি এনে সাততলা ভবনটি গড়ে তোলেন। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, উনিশ শতকে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের নোয়াপাড়ার প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন প্রফুল্ল কুমার সেন। সংক্ষেপে পি কে সেন। নোয়াপাড়ায় মগদাই পি কে সেন হাটটিও তাঁর নামেই প্রতিষ্ঠিত। পি কে সেন চট্টগ্রামের সদরঘাটে ১৬ শতক জমি কেনেন ১৮৯০ সালে। এ জায়গার ওপর নির্মাণ করেন ভবনটি। এটি সাততলা ভবন হওয়ার কারণে জায়গাটির নাম হয় পি কে সেন সাততলা। জমিদারি প্রথা চলে যাওয়ার পর ১৯৫৫–৫৬ সালের দিকে সদানন্দ ঘোষ, সুশীল ঘোষ ও চিন্তাহরণ ঘোষ তিন ভাইয়ের কাছে বাড়িটি বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমান পি কে সেন। এর আগে তিনি পরিবার–পরিজনদের পাঠিয়ে দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘোষ পরিবারের দুই ভাই চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলেও চিন্তাহরণ থেকে যান পি কে সেন ভবনে। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে রাজাকাররা তাঁকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। ভবনটিতে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। একটি দরজা–জানালাও আস্ত ছিল না। যুদ্ধের পর সেটি সংস্কার করে আবারও উপযোগী করে তোলা হয়। জৌলুস হারালেও অনেকের কাছে এটি এমনই পরিচিত যে গ্রাম থেকে আসা অনেক বয়োবৃদ্ধ এখনো বলেন পি কে সেন ভবনের কথা।












