পুরনো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না : জামায়াতের আমির

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল সমাবেশ দেশে আওয়ামী লীগ একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক : তাহের

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২০ জুলাই, ২০২৫ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরেক লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, পুরনো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতদিন ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের সামনের সড়ক ও পুরানা পল্টনের মোড়ে সভাসমাবেশ করলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এটাই জামায়াতে ইসলামীর প্রথম সমাবেশ। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম হয়। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।

জামায়াতের আমির বলেন, যারা বস্তাপচা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে নিতে চান, তাদের আমরা বলি, জুলাইযুদ্ধ করে যারা জীবন দিয়েছে, আগে তাদের জীবনটা ফেরত এনে দেন। যদি শক্তি থাকে ফেরত এনে দেন। আপনারা পারবেন না। যেহেতু পারবেন না, কাজেই নতুন ব্যবস্থায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে ইনশাল্লাহ।

তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশটা কেমন হবে? আমি বলি আরেকটা লড়াই হবে ইনশাল্লাহ। একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইনশাআল্লাহ। এই দুর্নীতির মূলোৎপাটন করার জন্য যা দরকার, আমরা তারুণ্য এবং যৌবনের শক্তিকে একত্রিত করে সেই লড়াইয়েও জিতব ইনশাল্লাহ।

বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, যাদের ত্যাগ এবং কুরবানির বিনিময়ে স্বৈরাচারের কঠিন অন্ধকার যুগের যাঁতাতলে পিষ্ঠ হয়ে যারা তিলে তিলে দুনিয়া থেকে নির্যাতিত হয়ে বিদায় নিয়েছেন, অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিদায় নিয়েছেন, যারা লড়াই করে আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন; আমরা তাদের সবার কাছে গভীরভাবে ঋণী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অস্তিত্ব যতদিন থাকবে, আল্লাহ যেন তাদের ঋণ পরিশোধ করার শক্তিটাও ততদিন আমাদের দান করেন। শহীদ আবু সাঈদরা যদি বুক পেতে না দাঁড়াত, এ জাতির মুক্তির জন্য যদি বুকে গুলি লুফে না নিত, হয়তো আজকের এই বাংলাদেশটা আমরা দেখতাম না। ইতোমধ্যে হয়তো আরো অনেক মানুষের জীবন ফ্যাসিবাদীদের হাতে চলে যেত। ২৪এ জীবনবাজি রেখে যুদ্ধটা যদি না হতো তাহলে আজকে যারা বিভিন্ন ধরনের কথা এবং দাবিদাওয়া পেশ করছেন, তারা তখন কোথায় থাকতেন?

জামায়াতের আমির বলেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালার এই নেয়ামত পাওয়া তাদের যেন অবজ্ঞা এবং অবহেলা না করি। শিশু বলে তাদের যেন তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করি। অহংকারে অন্য দলকে যেন তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করি। অরাজনৈতিক ভাষায় আমরা যেন কথা না বলি। যদি এগুলো আমরা পরিহার করতে না পারি, তাহলে বুঝতে হবে যারা পারবেন ফ্যাসিবাদের রোগ তাদের মধ্যে নতুন করে বাসা বেঁধেছে। রাজনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষা করে জাতীয় ঐক্যের বীজতলাটা আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে তৈরি করব ইনশাআল্লাহ।

ডায়াসে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। তখন মঞ্চে থাকা নেতারা তাকে ধরাধরি করে তোলেন। মিনিটখানেক অপেক্ষা করে আবার বক্তব্য শুরু করেন। কিন্তু আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। এরপর মঞ্চে থাকা দলের নেতারা তাকে ধরে বসান। খানিকটা সময় অপেক্ষা করে না দাঁড়িয়ে মঞ্চে ডায়াসের পাশে পা মেলে বসেই বক্তব্য দিতে থাকেন। এ সময় তার পাশে চিকিৎসকদেরও দেখা যায়। বসে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, আল্লাহ যত সময় হায়াত দিয়েছেন তত সময় মানুষের জন্য লড়াই করব ইনশাআল্লাহ। এ লড়াই বন্ধ হবে না। বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জন হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। বলছিলাম, জামায়াতে ইসলামী যদি আল্লাহর ইচ্ছা এবং জনগণের ভালোবাসায় বাংলাদেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে মালিক হবে না, সেবক হবে ইনশাআল্লাহ। লক্ষ জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে, তাহলে কোনো এমপি, কোনো মন্ত্রী আগামীতে সরকারি প্লট গ্রহণ করবে না। কোনো এমপি ও কোনো মন্ত্রী ট্যাঙবিহীন কোনো গাড়িতে চড়বে না। কোনো এমপি ও কোনো মন্ত্রী তার নিজের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবে না। কোনো এমপি ও কোনো মন্ত্রী যদি তার নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকেন, কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ১৮ কোটি মানুষের সামনে তারা তার প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য হবেন।

জামায়াতের আমির বলেন, চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি আমরা করব না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না। তিনি বলেন, আজীবন সবার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছি, জেলজুলুমের পরোয়া করি নাই। আমার আফসোস, ২৪ সালে জাতিকে মুক্তি দিতে গিয়ে যারা জীবন দিয়ে শহীদ হলো, আমি তাদের একজন হতে পারলাম না। আপনাদের কাছে দোয়া চাই, ইনসাফের ভিত্তিতে একটি দেশ গড়ে তোলার জন্য আগামীতে যে লড়াই হবে, আমার আল্লাহ যেন সেই লড়াইয়ে আমাকে একজন শহীদ হিসেবে কবুল করেন।

তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় শহীদ নেতৃবৃন্দ, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে, শাপলা গণহত্যা, সারা দেশের গণহত্যা, চব্বিশের গণহত্যা যারা করেছে, তাদের সবার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে নিশ্চিত করতে হবে। এদের বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া শুরু না করা পর্যন্ত পুরনো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না।

দেশে আওয়ামী লীগ একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক : গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ দেশে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ কী করেছে বলতে চাই না; গন কেইস। তাদের এই দেশে ঢোকার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। জামায়াতে ইসলামী নতুন বাংলাদেশ চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা পুরনো কায়দায় এই দেশে আবার শাসন করতে চায়, জনগণ তাদের সেই সুযোগ দেবে না।

সমাবেশের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমুদ্র : গতকাল দুপুর ২টা থেকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে মঞ্চের চারপাশে নেতাকর্মীদের সমাবেশ জনসভায় রূপ নেয়। বেলা ১০টা থেকে সঙ্গীত পরিবেশন করে সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী। মধ্য রাত থেকেই আসতে শুরু করেন বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা।

অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে ৭ দফা দাবিতে এই সমাবেশ করেছে জামায়াত। দলটির দাবির মধ্যে রয়েছে সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সমতাভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা।

সমাবেশে জামায়াত ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূস আহমদসহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি রেজাউল করিম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমঞ্চে পড়ে গেলেন জামায়াতের আমির, বসেই দিলেন বক্তৃতা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন : প্রেস সচিব