চট্টগ্রাম বন্দরের অর্ধ শতাব্দীরও কম সময়ের পুরনো জেটিগুলো ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন আগের প্রযুক্তি এবং নানা সীমাবদ্ধতায় নির্মিত জেটিগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সচল রাখার চেষ্টা করা হলেও জেটি জুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্ত শুধু জেটিই নয়; বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিং থেকে শুরু করে নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত দেশি বিদেশি হাজার হাজার মানুষের জন্যও হুমকি হয়ে উঠছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিগুলোর প্রথম ছয়টি তুলনামূলকভাবে বেশি পুরনো। বিশেষ করে এক নম্বর থেকে ছয় নম্বর জেটি ১৯৮১ সালে নির্মাণ করা। এসব জেটির বয়স চল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে। একটি অবকাঠামোর জন্য এই বয়স তেমন কিছু না হলেও তৎকালীন প্রকৌশলগত নানা সীমাবদ্ধতা, রডের দুর্বলতাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে জেটিগুলো নির্মাণ করতে হয়েছিল। বন্দরের জেটি মানেই বিশেষায়িত একটি স্থাপনা। নদীর পাড় পাকা করে দিলেই জেটি হয় না। নদীর স্রোত ঠিক রেখে তলদেশ থেকে পিলারের পর পিলার নির্মাণে নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় একেকটি জেটিতে। এভাবে নদীর বেশ গভীর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাটাতন। তার উপর ঢালাই দেওয়া হয়েছে রড সিমেন্ট ও কংক্রিটের। প্রতিটি জেটির নিচেই নদী রয়েছে। রয়েছে তীব্র স্রোত। জাহাজ থেকে জেটিতে যেখানে পণ্য উঠা নামা করা হয় মূলত সেখানে আরসিসির নিচে রয়েছে গভীর নদী।
চট্টগ্রাম বন্দরের পুরনো জেটিগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ ভালো রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু দিন দিন ব্যবহার এবং চাহিদা এমন পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে যে সবকিছু বন্ধ করে জেটি সংস্কার কিংবা নতুন করে ঢালাই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পুরনো জেটিগুলোতে অনেকগুলো বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যেগুলোর নিচে বয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলীর স্রোত। কোনো কারণে কেউ এই গর্তে পড়লে কিংবা কোনো পণ্য পড়লে বড় ধরনের অঘটন ঘটার আশংকা রয়েছে।
গতকাল চট্টগ্রামের একটি শিপিং এজেন্সির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি দু-চারটি গর্ত বা কেউ পড়ে গেল এমন নয়। বিষয়টি আরো গুরুতর। এসব গর্ত কি কোনো ম্যাসেজ দিচ্ছে? জেটিগুলোর আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়ার ম্যাসেজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, যখন জেটিগুলো নির্মাণকরা হয় তখন প্রযুক্তি অনেক পেছনে ছিল। সেই পিছিয়ে পড়া প্রযুক্তি দিয়ে যা করা হয়েছিল তা দেশ ও জাতিকে বহুবছর সার্ভিস দিয়েছে। এখন হয়তো নতুন করে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা হয়। তারা বলেন, জেটির গর্ত মেরামত করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। জেটিগুলো পুরনো হলেও এখনো বেশ শক্ত বলে তারা মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, গর্ত সৃষ্টি হওয়া ৫ ও ৬ নম্বর জেটিতে খোলা পণ্যবাহী জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়। তবে ৬ নম্বর জেটিতে মাঝে মধ্যে কন্টেনার জাহাজও বার্থিং দেয়া হয়।