ঈদের ছুটি শেষে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। দুই সপ্তাহ আগেও ফ্লোর প্রাইসে ক্রেতা পাওয়া যেত না যেসব কোম্পানির, এখন বাড়তি দামেও বিক্রি হচ্ছে লাখ লাখ শেয়ার। সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের চার ভাগের এক ভাগের বেশি হয়েছে এই একটি খাতে। দুই সপ্তাহ আগেও কোনো দিন ৫ শতাংশ, কখনও তার চেয়ে কম লেনদেন হত খাতটিতে। দর বৃদ্ধির শীর্ষেও এ খাতটির প্রাধান্য দেখা গেছে। শীর্ষ দশ কোম্পানির চারটিই একটি খাতের। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এমন ২০টি কোম্পানির ১০টি বস্ত্র খাতের। খবর বিডিনিউজের।
সকালে বেড়ে বিকালে কিছুটা কমলেও শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক প্রবণতাতেই থাকে সূচক। তবে লাফ দিয়েছে লেনদেন। ৮৩টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির দিন পতন হয়েছে ১০৯টির। ১৮০টি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে। সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৩৭২টি কোম্পানির শেয়ার। ক্রেতা ছিল না ১৭টির। আগের দিন কোনো রকমে ছয়শ কোটি টাকার ঘর পার হলেও সেটি এক লাফে হয়েছে ৮৯০ কোটি ৬৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০৪ কোটি টাকা বা ২৬ শতাংশই হয়েছে বস্ত্র খাতে। গত ১২ জুনের পর এটিই সর্বোচ্চ লেনদেন। সেদিন হাতবদল হয়েছিল ৯৮১ কোটি ৪৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকার শেয়ার। ঈদুল ফিতরের পর থেকে প্রায় প্রতিদিন সব খাতকে ছাড়িয়ে যাওয়া বীমায় আগ্রহ কমছেই। এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৯৩ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। লেনদেন কমে আসতে থাকার পর দর হারাচ্ছে কোম্পানিগুলো। ফ্লোর প্রাইস ছাড়িয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলো একটু একটু করে আবার ফ্লোরের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। জীবন বীমার ১৫ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে দুটির, দুটি আগের দিনের দরে এবং ১০টি কোম্পানি দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করেছে। একটির ক্রেতা ছিল না। সাধারণ বীমার ৪২ কোম্পানির মধ্যে সাতটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৬টির দর। আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে আটটির। আর একটির ক্রেতা ছিল না।
লেনদেনের পাশাপাশি দর বৃদ্ধিতেও এগিয়ে বস্ত্র খাত। ২৭টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে পাঁচটির দর। ২৫টি কোম্পানি এখনও ফ্লোর প্রাইসে আছে। ফ্লোর ছাড়িয়ে যাওয়া ৩২টি কোম্পানির মধ্যে কমপক্ষে ১৫টি গত কয়েক দিনে ‘মুক্ত হয়েছে’। যেদিন ফ্লোর ছাড়িয়েছে, সেটিন সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে হাতবদল হতেও দেখা যাচ্ছে।
দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে প্রকৌশল খাতের অবস্থানও ছিল তুলনামূলক ভালো। নয়টির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১৪টির দর। অবশ্য অন্যান্য অনেক খাতের মত এখানেও ফ্লোরে কোম্পানির সংখ্যাই বেশি। আগের দিনের দরে হাতবদল হওয়া কোম্পানির সংখ্যা ১৮টি। এই খাতে হাতবদল হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা, যা খাতওয়ারী লেনদেনের তালিকায় ছিল চতুর্থ স্থানে। লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খাদ্য খাতে হাতবদল হয়েছে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা। তবে চারটি কোম্পানির বৃদ্ধির দিন কমেছে ১৩টির দর। ব্যাংক খাত এখনও ‘ঘুমিয়ে’ থাকলেও পরপর দ্বিতীয় দিন সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হলো রূপালী ব্যাংকের। অথচ দুই দিন আগে পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইসে ক্রেতা ছিল না কোম্পানিটির।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে যেসব কোম্পানি : খাত হিসেবে বস্ত্রের প্রাধান্য থাকলেও সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হওয়া চারটি কোম্পানি ছিল অন্য খাতের। এগুলো হল খাদ্য খাতের ফুওয়াং ফুডস, ব্যাংকিং খাতের রূপালী ব্যাংক এবং প্রকৌশল খাতের ডোমিনোজ স্টিল ও অলিম্পিক একসেসোরিজ। চারটি কোম্পানির মধ্যে তিনটির ফ্লোর ছুটেছে সম্প্রতি, একটির গত মাসে। এর পরের ছয়টি কোম্পানির চারটিই বস্ত্র খাতের। এর মধ্যে হামিদ ফেব্রিঙের দর ৮ শতাংশের বেশি, সিএনএ টেঙটাইল ও জেনারেশন নেঙট ও ড্রাগন স্যুয়েটারের দর ৭ শতাংশের বেশি। অন্য দুটি কোম্পানি খান ব্রাদার্সের দর সাড়ে ৬ শতাংশ এবং ইন্দোবাংলা ফার্মার দর বেড়েছে ছয় শতাংশের কাছাকাছি। বস্ত্র খাতের আরও একটি কোম্পানির দর ৫ শতাংশ, চারটির ৪ শতাংশ, দুটির ৩ শতাংশ, ছয়টির বেড়েছে ২ শতাংশ।