পিলেট ও বুলেট বিদ্ধ রোগীদের রক্তস্নাত ভয়াবহতার সাক্ষ্য দিলেন চিকিৎসক

| মঙ্গলবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৫ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

চিরতরে এক চোখের দৃষ্টি হারানো ৪৯৩ জন ও দুই চোখের দৃষ্টি হারানো ১১ জন রোগীসহ চোখে পিলেট ও বুলেট বিদ্ধ রোগীদের রক্তস্নাত ভয়াবহতার সাক্ষ্য দিলেন চিকিৎসক। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল১ এ গতকাল সোমবার শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা নিলা। খবর বাসসের।

সাক্ষীর জবানবন্দিতে এই চিকিৎসক বলেন, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই থেকে আমাদের হাসপাতালে রোগী আসা শুরু করে। প্রথম দিন পাঁচজন রোগী পেয়েছিলাম যারা মেটালিক পিলেট ও বুলেট বিদ্ধ ছিলো। ১৮ জুলাই ছিল রক্তস্নাত এক দিন। সেদিন আনুমানিক ১০০ রোগী ভর্তি হয়েছিলো।

এর বাইরে আরও শতাধিক রোগীকে ওইদিন চিকিৎসা দেয়া হয়। ওইদিন দুপুরে আমি ইমার্জেন্সির সামনে এসে এক ভয়াবহ চিত্র দেখি। ১৪ থেকে ২৫ বছর বয়সী শতাধিক রোগীর একটা বড় অংশের কেউ এক চোখ, কেউ তাদের রক্তে ভাসা দু’চোখ ধরে ছিলেন। তাদের চেহারা রক্তস্নাত ছিল।

সাক্ষীর জবানবন্দিতে জাকিয়া সুলতানা নিলা বলেন, ১৮ জুলাই ১০ টি ওটি টেবিলে রাত ৯ টা পর্যন্ত অপারেশন চলে। ১৯ জুলাই একই রকম চিত্র দেখতে পাই। অধিকাংশই মেটালিক পিলেট ও কেউকেউ বুলেট দ্বারা আহত ছিলেন। আহতের ধরনে ছিলো কারো কর্নিয়া ছিদ্র, কারো চোখের সাদা অংশ ছিদ্র কিংবা কারো চোখ ফেটে যাওয়া অবস্থায় ছিলো।

২০২৪ সালের ৪, ,৬ আগস্ট অনেক বেশি রোগী রিসিভ করেন জানিয়ে এই চিকিৎসক তার জবানবন্দিতে বলেন, আমাদের হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে এক চোখে চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা ৪৯৩ জন। দুই চোখে চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা ১১ জন। দুই চোখে গুরুতর দৃষ্টি স্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যা ২৮ জন। আর এক চোখে গুরুতর দৃষ্টি স্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যা ৪৭ জন।

অধিকাংশ রোগী নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই সময় নিজের ডাক নাম ব্যাবহার করেছেন জানিয়ে এই চিকিৎসা বলেন, রোগীরা তাদের ভুল মোবাইল নম্বর ও আইডি কার্ড নাম্বার দিতো নিরাপত্তার কথা ভেবে বা কৌশল অবলম্বন করতে।

গতকাল সোমবার ট্র্যাইব্যুনালে প্রসিকিউটসন পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম। একসময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে জেরায় ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এদিকে এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আলমামুন সাক্ষ্য গ্রহণের সময় কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ, দামও কমছে
পরবর্তী নিবন্ধচার বছর পর মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার