পিলারের গোড়া থেকে বালু আহরণ, হুমকির মুখে সেতু

চকরিয়ার হারবাংয়ের সাবানঘাটা

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন চকরিয়ার হারবাংয়ের সংরক্ষিত বনের ভেতর পাহাড় সাবাড় করাসহ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করছে একদল দুর্বৃত্ত। বালুকাময় পাহাড় সাবাড় করা, হারবাং ছড়াখালের দুই তীরের মাটি ধসে যাওয়ার পর ছড়া থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।

সরেজমিন দেখা গেছে, হারবাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবানঘাটা এলাকাসহ হারবাং ছড়া থেকে সেই বালু আহরণ করতে গিয়ে খোদ সাবানঘাটায় নির্মিত একটি সেতুর পিলারের গোড়াও ভেসে ওঠেছে। একদিকে পাহাড় সাবাড় করা, অন্যদিকে ছড়া ও সেতুর পিলারের গোড়া থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত সেই বালু ডাম্পার ট্রাকভর্তি করে সাবানঘাটা সেতুর ওপর দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে। এতে সেতুটির মাঝখানেও দেবে যাচ্ছে।

স্থানীয় পরিবেশ সচেতন একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, পরিবেশ বিধ্বংসী এই কর্মকাণ্ডের ফলে যেকোনো সময় সাবানঘাটা সেতুটি ধসে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়াসহ মানুষের চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, তারা এখানকার বাসিন্দা হলেও একেবারে নিরীহ। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা এর প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয় না। উপরন্তু বালুদস্যুরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় নির্বিঘ্নে তাদের কর্মকাণ্ড সংঘটিত করছে। এতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ছড়ার ওপর নির্মিত সাবানঘাটা সেতুটিও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

অভিযোগ ওঠেছে, যেসব স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু সংগ্রহ করা হচ্ছে সেই এলাকাটি একেবারে সংরক্ষিত বনের ভেতর। আর সেই সংরক্ষিত বন চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন চুনতি রেঞ্জের হারবাং বনবিটের অধীন। কিন্তু স্থানীয় হারবাং বনবিট কার্যালয়ের বাগান মালি মো. মহসিনসহ কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে আঁতাত করেই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বালু দস্যুরা পরিবেশ বিধ্বংসী এই অপতৎপরতা চালিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছেন।

যারা এই পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন তারা হারবাং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তদ্মধ্যে রয়েছেন জিয়াবুল হক, হেলাল উদ্দিন ড্রাইভার, আবদুল্লাহ, মো. মানিক, ইমাম হোসাইন, আনোয়ার হোসেন, মনজুর আলম, নুরুল্লাহ, জামাল উদ্দিন, মো. জামালসহ আরও অনেকে। তারা হারবাং ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড যুবদল ও শ্রমিকদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অবশ্য তাদের সঙ্গে বেশ সখ্যতা রয়েছে হারবাং বনবিটের বাগান মালি মহসিনসহ কয়েকজন কর্মচারীর। এই কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অভিযানে গেলে তার আগেই অভিযানের খবর ফাঁস করে দেওয়া হয় বালু দস্যুদের কাছে।

অভিযোগের বিষয়ে হারবাং বনবিটের বাগান মালি মোহাম্মদ মহসিন দাবি করেন, যারা সংরক্ষিত বনের ভেতর থেকে বালু আহরণ করে পাচার করছেন তাদের সাথে কোনো সখ্যতা তার নেই। এই বিষয়ে হারবাং বনবিট কর্মকর্তা ওমর ফারুক স্বাধীন বিটের নিয়ন্ত্রণাধীন সংরক্ষিত বনের ভেতরকার পাহাড় সাবাড়সহ হারবাং ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, যারা বালুদস্যু তারা অনেক প্রভাবশালী। তারা সংরক্ষিত বনের পরিবেশ ধ্বংস করে আহরিত বালু স্তূপ করছেন রক্ষিত (ডিসি ল্যান্ড) জায়গায়। যার কারণে সেই বালু জব্দ করা তাৎক্ষণিভাবে সম্ভব হয় না। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে লিখিতভাবে পত্র দেওয়া হয়েছে। বিট কর্মকর্তা আরও বলেন, ইতোপূর্বেও অনেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নতুন করে যারা এই অপকর্ম করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি সবেমাত্র এই রেঞ্জে যোগ দিয়েছি। তাই কোন এলাকায় কী হচ্ছে তা এখনো রপ্ত করতে পারিনি। অবশ্য যারা সংরক্ষিত বনের ভেতর পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ অবৈধ বালু আহরণের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় দুই ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধসারদায় প্রশিক্ষণরত আরও ৫৯ এসআইকে শোকজ