পিঠাপুলি উৎসব বাঙালির সংস্কৃতির অংশ

জোনাকী দত্ত | শনিবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বেগম সুফিয়া কামাল তাঁর ‘পল্লী স্মৃতি’ কবিতায় গ্রাম বাংলার পৌষ পার্বণে শীতের পিঠা খাওয়ার শাশ্বত রূপ অঙ্কন করেছেন এভাবে

‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশীতে বিষম খেয়ে,

আরো উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।’

পৌষ মাসের শেষের দিকে শীত জেঁকে বসে। মাঘে শীতের তীব্রতায় ঘরে ঘরে চলে রসালো পিঠা পুলির আয়োজন। বাড়ি বাড়ি চলে অতিথি আপ্যায়নের ধুম। শীতে মা, ঠাকুরমা যখন সকালে চুলায় গরম গরম পিঠা তৈরি করে তখন সবাই মিলে একসাথে বসে সেই পিঠা খেতে কতই না মজা আর আনন্দের। সেই পিঠার স্বাদই আলাদা।

পৌষ পার্বণ বা পিঠে পার্বণ একটি লোক উৎসব। বাংলা পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে এই উৎসব পালিত হয়। এর অপর নাম তিলুয়া সংক্রান্তি বা পিঠে সংক্রান্তি। মধ্যযুগের বাংলা মঙ্গল কাব্যে নানা প্রকার পিঠে ও পিঠে গড়ার বিচিত্র সব উপাখ্যানের উল্লেখ রয়েছে। বছরের বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত পিঠে পর্বের মধ্যে পৌষ সংক্রান্তির পৌষ পার্বণই সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ। এই দিনটি হিন্দু পঞ্জিকায় মকর সংক্রান্তি বা উত্তরায়ণ সংক্রান্তি নামেও পরিচিত। মকর সংক্রান্তি শব্দটি দিয়ে নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশকে বোঝানো হয়ে থাকে। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী সংক্রান্তি একটা সংস্কৃত শব্দ। এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে।

পৌষ পার্বণের সময় নানা রকমের গুড় বাজারে আসে। মিষ্টি খেজুরের রস থেকে খেজুরের গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে চারদিকে ম ম করে। এসব গুড় থেকে তৈরি পিঠা কতই না মজার। নতুন ধানের চালের গুঁড়া, খেজুরের গুড়, নারিকেল, দুধ দিয়ে তৈরি হয় নানা রকম পিঠা। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য পিঠা হচ্ছে ভাপ, চিতই, পাটিসাপটা, বিনি, মালপোয়া, ঝালকুশ, নকশা, মুঠা, মুগ, সিমুই, ছিটা পিঠা প্রভৃতি বাহারি রকমের পিঠা। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা পিঠা পুলির স্বাদ ভুলে ফাস্টফুডের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। অনেকে আবার পিঠা তৈরি করতেও জানে না। তবে বাঙালির কাছে পিঠা পুলি উৎসব সংস্কৃতির একটা অংশ। এই উৎসবের আয়োজন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশি ও মানুষের সাথে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও বন্ধন আরও দৃঢ় ও মজবুত করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাঁতার কাটার অভ্যাস গড়ে তোলা হোক
পরবর্তী নিবন্ধশীতের মুগ্ধতায়…