বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও কক্সবাজার–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, কেউ কেউ পিআর পিআর বলে এখনো গলা ফাটাচ্ছে। উদ্দেশ্য কিন্তু পিআর না, উদ্দেশ্য হচ্ছে যদি কিছু পায়। যাই হোক আমরা আলাপ–আলোচনা করবো, যে সমস্ত ভাইয়েরা, যে সমস্ত রাজনৈতিক দল, পিআর পিআর করে হয়রান–পেরেশান হচ্ছেন আসুন আলাপ–আলোচনা করি, আপনাদের কী দাবি–দাওয়া আছে তা শুনবো এবং আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ভাষা হচ্ছে মানুষ যাকে পছন্দ করবে তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। পিআরের ভাষা হচ্ছে মার্কার মধ্যে ভোট দেবে, কে এমপি হবে কেউ জানে না। কথা হচ্ছে সেই পিআরে গণতন্ত্র নাই।
তিনি গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে চকরিয়া সরকারি কলেজ মাঠে চকরিয়া উপজেলা বিএনপির দ্বি–বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অধিকার আদায়ের জন্য, কথা বলার জন্য, সমাবেশের অধিকারের জন্য, এই মানুষের কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই তো আমরা সংগ্রাম করেছি, রক্ত দিয়েছি। ১৬ বছর অনবরত এই দেশের মানুষ সংগ্রাম করেছি, রক্ত দিয়েছি। শহীদ হয়েছি ভোটাধিকার আদায়ের জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য, সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জন্য, মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার আদায়ের জন্য। সুতরাং সেই সমস্ত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে ভোটের অধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আমলে রাজনীতি ছিল কারাগারে, রাজনীতি নির্বাসিত ছিল লন্ডনে, রাজনীতি নির্বাসিত ছিল শিলংয়ে। বাংলাদেশকে করদ রাজ্য করার জন্য শেখ হাসিনা সব কিছু করেছে। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে। নিশিরাতের ভোটের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে নির্বাসিত করেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা গণতন্ত্রকে আটকে রেখেছিল কারাগারে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছে সে এদেশের পক্ষের কোনো শক্তি নয়। হাসিনা নিজেই প্রমাণ করেছে সে এই দেশের লোক না। আওয়ামী লীগ নিজেরাই প্রমাণ করেছে তারা এদেশের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। তারা অন্য একটি দেশের, অন্য একটি দলের অঙ্গ সংগঠন ছিল বাংলাদেশে। সালাহউদ্দিনের ভাষায়, শেখ হাসিনা মরিয়া প্রমাণ করিল সে ভারতের লোক। আওয়ামী লীগ পতনের মধ্য দিয়ে নিজেদের বিনাশের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা এই দেশের রাজনৈতিক কোনো শক্তি ছিল না। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ ছিল একটা মাফিয়া শক্তি, আওয়ামী লীগ ছিল একটা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী, আওয়ামী লীগ ছিল একটি ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী। আওয়ামী লীগের ডিএনএতেই গণতন্ত্র নেই বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির অন্যতম শীর্ষ এই নেতা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বললেই বলতো, দেশদ্রোহী। কেউ বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেই বলতো একে সাইবার সিকিউরিটি আইনে গ্রেপ্তার করো। তারা কথা বলার অধিকার বন্ধ করেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বন্ধ করেছে। শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টের উত্থান যাতে আর না হয় তার জন্য গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।
সালাহউদ্দিন বলেন, নির্বাচনের মৌসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা হয়ে গেছে। তফসিল ডিসেম্বরের শুরুতে ঘোষণা হবে ইনশাআল্লাহ। আপনারা এখন ঘরে ঘরে যাবেন, ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইবেন। তিনি আহ্বান করে বলেন, আসুন দেশের সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল দেখে যান, কিভাবে উন্মুক্ত পরিবেশে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হাসছে, কী উন্মুক্ত পরিবেশে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকশিত হচ্ছে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল উদ্দিন ও কঙবাজার–১ (চকরিয়া–পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদ। প্রধান বক্তা ছিলেন কঙবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না। সম্মেলন উদ্বোধন করেন কঙবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ও কাউন্সিল সঞ্চালনা করেন কমিটির সদস্য সচিব এম মোবারক আলী। এছাড়া বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, জেলা বিএনপির সহ–সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে সম্মেলন ও কাউন্সিল শুরুর আগে দলে দলে গাড়ির বহর নিয়ে হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থক সম্মেলস্থলে আসেন। দীর্ঘ ৫ বছর পর সাড়ম্বরে আয়োজিত সম্মেলন ঘিরে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীর মাঝে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখা দেয়।