গ্রামের মেঠোপথে বন্ধুদের সাথে গল্পে মেতে হেঁটে যাচ্ছেন একজন মানুষ। চারদিকে উৎসুক জনতা দেখছেন সে দৃশ্য। একসময় সেই পথ এসে শেষ হলো একটি খালের কাছে। এবার তিনি পেন্টকে হাঁটু পর্যন্ত তুলে নিলেন। সবাইকে সাথে নিয়ে পায়ে হেঁটে খাল পেরুলেন। অপর প্রান্তে পথের ধারে একটি বেঞ্চে বাল্যবন্ধুকে সাথে নিয়ে দীর্ঘ আড্ডায় মেতে উঠলেন তিনি। একসময় সেই আড্ডায় বাল্যকালের হাজারো স্মৃতি বলতে বলতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো, ভাঙল সেই আড্ডা।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস এলাকায় নিজ গ্রামের বাড়িতে এভাবেই ব্যতিক্রমী ঈদ উদযাপন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। সেই আড্ডার গল্পের বিষয়বস্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে দেয়া সেই ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজ ঈদের দিন আমার গ্রামে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পুরো বছর আমি আমাদের গ্রামেই ছিলাম। আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদীর তীরে আমার ছেলেবেলার বন্ধুদের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছি। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী তিনবার আমাদের গ্রামে এসে বহু মানুষকে হত্যা ও নির্যাতন করে। প্রথমবার যখন পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের গ্রামে আসে তখন পুরো গ্রাম নদী পার হয়ে পাশের জঙ্গলে পালিয়ে যায়। তখন আমি আট বছরের ছোট ছেলে। আমিও এই নদী পার হয়ে পালিয়েছিলাম এবং ভোলা বোদ্দা (ভোলাইয়া বদ্দা) আমাকে নদী পার হতে সাহায্য করেছিল। আজ যখন আমরা গ্রামের চারপাশে ঘুরছিলাম এবং একই নদী পার হচ্ছিলাম তখন তিনি আমার সাথে ছিল (বেঞ্চে আমার পাশে বসা)। এটা সত্যিই অসাধারণ অনুভূতি ছিল এবং আমার ১৯৭১ সালের স্মৃতি মনে পড়ছিল এবং ইচ্ছে হচ্ছিল ছেলেবেলার বন্ধুদের সাথে নদীর বালিতে আবার যদি খেলতে পারতাম!’
তথ্যমন্ত্রীর দেয়া এই ফেসবুক পোস্টের নিচে কমেন্টে একজন মন্ত্রীর গ্রামের মেঠোপথে এভাবে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যকে সাধুবাদ জানান এবং ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন বিভিন্ন মহল। এর আগে সকালে নিজগ্রামের বাড়ি সংলগ্ন মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় শেষে গ্রামবাসীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ও পরে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি দেন তথ্যমন্ত্রী। এসময় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশ যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে তখন দেশি–বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে দেশ যেন উন্নয়ন অভিযাত্রায় এগিয়ে যায় সেটিই আজকের প্রত্যাশা। দেশ থেকে যেন সাংঘর্ষিক রাজনীতি চিরদিনের জন্য বিদায় নেয় সেই প্রত্যাশাও করেন তিনি। এদিকে শুধু গ্রামেই নয়, চট্টগ্রাম শহরেও স্কুল ও বাল্যকালের বন্ধুদের সাথেও আড্ডায় মেতে উঠতে দেখা যায়। সেটা নিয়েও বন্ধুদের সাথের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন তথ্যমন্ত্রী।