পাহাড়ে পাহাড়ে শোভা পাচ্ছে জুমের পাকা ধান। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার পাহাড়িদের জুম ক্ষেতে পাকা ধানের গন্ধ ছড়াচ্ছে পাহাড়ি জনপদগুলোতে। সোনালি ধানের দৃশ্য নজর কাড়ছে ভ্রমণকারীদেরও। এদিকে ফসল ঘরে তোলার আনন্দে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। এ বছর আশানুরূপ ভালো ফলন হয়েছে দাবি জুমিয়াদের।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে জুমচাষের আবাদ হয়েছে। তবে গতবছরের তুলনায় এবার জুম চাষ কমেছে প্রায় চারশ হেক্টর জমিতে। জুমে গ্যালন, পিডি, চাকমা চিকন, বিনি, বড়ো ধানের স্থানীয় ঐতিহ্য রয়েছে। এছাড়া ধান ছাড়াও জুমে সাথী ফসল হিসাবে জুমিয়ারা ভুট্টা, মরিচ, যব, সরিষা, মিষ্টি কুমড়া, মারফা, টকপাতা, ফুলসহ বিভিন্ন রকমের সবজি উৎপাদন করে। জুমের ধানসহ অন্যান্য ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে জুমিয়া পরিবারগুলো। পাহাড়ের জুম চাষ থেকে জুমিয়ারা সারা বছরের খাদ্য সংরক্ষণ করে। জেলায় বসবাসরত ম্রো, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমী, লুসাই, চাকমা, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশরাই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। জুমিয়া পরিবারগুলো প্রতি বছর বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে জুম চাষের জন্য পাহাড়ে আগুন লাগান। আর মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুম চাষ আরম্ভ করেন। প্রায় ৩/৪ মাস পরিচর্যার পর বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে তারা। চিম্বুক সড়কের ম্রোলং পাড়ার জুমচাষী মেনুলুং ম্রো বলেন, এ বছর জুমের আশানুরুপ ভালো ফসল হয়েছে। জুম ক্ষেতে ধানসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি লাগিয়েছি। জুমে উৎপাদিত পাঁকা ধান কেটে ঘরে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। নবান্ন উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতিও চলছে।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এম এম শাহ নেওয়াজ জানান, পাহাড়ে জুম চাষের জমিতে হওয়া ককরো, গ্যালন, পিডি, চাকমা চিকন, বিনি, বড়ো ধানের স্থানীয় ঐতিহ্য রয়েছে। তবে বর্তমানে এগুলোর ফলন খুবই কম। ফলন বাড়ানোর জন্য নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত আাবাদের চেষ্টা করা হচ্ছে। চাষীরাও সাদরে বিষয়টি গ্রহণ করছে। প্রদর্শনী ও প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় বিগান-৪৮ জাতের ৩২৮ হেক্টর জমিতে এবং ৮৩ নামের একটা উচ্চ ফলনশীল ধান এক হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। জুম চাষীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে মোটিভেশন করে কাজ করানো যায়, তাহলে উচ্চ ফলশীল জাতের ধান লাগানো যাবে। তবে দিন দিন জুমের উপযোগী পাহাড় কমে যাচ্ছে। পাহাড়ে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ছাড়া উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই।