আজ বিশ্ব হাতি দিবস। বনের হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে বন বিভাগের নেয়া উদ্যোগের কারণে রাঙামাটিতে বাড়ছে হাতির সংখ্যা। জেলার বরকল ও লংগদুতে বন্য হাতির সুরক্ষায় কাজ করছে এ্যালিফেন্ট রেসপন্স টিম। এসব এলাকায় দীর্ঘমেয়াদে হাতি সুরক্ষায় মানুষের সাথে হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে দ্রুত ক্ষতিপুরণ প্রদানের অনুরোধ প্রাণী গবেষকদের। অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে হাতির সংখ্যা। গত কয়েক মাসে নতুন করে দুইটি হাতির শাবক জন্ম দিয়েছে মা হাতি। বর্তমানে ঐ অঞ্চলে হাতির সংখ্যা ১৪টি যা আগের বছর ছিল ১২টি।
সম্প্রতি রাঙামাটির বরকলের সবুজ পাহাড়ে এক পালে বিচরণ করছে ৮টি হাতির দল। দলে ৫টি পূর্ণবয়স্ক হাতির দলের সাথে রয়েছে একটি কিশোর ও দুইটি শাবক। পাহাড়ি বনে পর্যাপ্ত খাবার, কাপ্তাই লেকে পর্যাপ্ত পানি থাকায় হাতির জন্য তা আদর্শ এলাকা হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর পর পর হাতি জন্ম দিচ্ছে নতুন শাবক। বাড়ছে হাতির সংখ্যা। শেরপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য প্রান্তে প্রায় মানুষের দ্বারা হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও গত অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে এসব হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া হাতির ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের পাশাপাশি হাতির সুরক্ষায় কাজ করছে স্থানীয় এ্যালিফেন্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা। হাতির জীবন সুরক্ষার পাশাপাশি হাতি রক্ষায় মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে এই টিমের সদস্যরা। হাতির অবস্থান জানিয়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সতর্কও করে তারা।
বরকলের বরুণাছড়ি এ্যালিফেন্ট রেসপন্স টিমের (ইআরটি) সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, হাতি আমাদের ক্ষতি করলেও আমরা হাতির ক্ষতি করি না। হাতি ক্ষতি করলে আমরা সরকারকে জানাই। সরকার ক্ষতিপূরণ দেয়। হাতি লোকালয়ে চলে আসলে বাঁশি বাজিয়ে তাদেরকে তাড়িয়ে দিই। হাতিকে কেউ আক্রমণ করে না।
স্থানীয় ইআরটিএর সদস্যরা বলেন, আমরা হাতির সুরক্ষায় কাজ করি। তবে আমাদের কোন ভাতা দেয় না। বন বিভাগ যদি আমাদের ন্যূনতম ভাতা দিত তাহলে আমরা আরো ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারতাম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, রাঙামাটি পাহাড়ি বনে পর্যাপ্ত খাবার, কাপ্তাই লেকে পানির প্রাচুর্যতা এবং মানুষের বসতি তুলনামূলক কম হওয়ায় এলাকাটি হাতির আদর্শ বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আমরা যদি হাতি সংরক্ষণ করতে পারি স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করতে হবে। এখানে হাতিকে র্দীঘমেয়াদে সংরক্ষণ করতে হলে দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনতে হবে। হাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণের আওতায় আনতে হবে। শেরপুর, চট্টগ্রাম বা কঙবাজারে মানুষের সাথে হাতির যে দ্বন্দ্ব সংঘাত চলমান তা এখানে নেয়। বরকলের এই এলাকায় মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্ব অনেকটায় কম।
বিচরণ ক্ষেত্রগুলোতে হাতির সাথে মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। গত ৫ বছরের হাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের ৩৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। বন বিভাগের রাঙামাটি অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, হাতির সাথে মানুষের দ্বন্দ্ব আছে। সরকার চেষ্টা করছে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার। তবে হাতি যেন বনাঞ্চলে ফিরে সেই চেষ্টা করতে হবে। এজন্য সরকারসহ বিদেশি দাতাসংস্থার কাছে প্রকল্প দেয়া আছে। ৫ বছর মেয়াদী এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হাতি লোকালয় ছেড়ে বনে ফিরে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতায় বরকল ও লংগদুতে ১৪টি এশীয় বন্য হাতি রয়েছে।