বাংলাদেশে রয়েছে কফির ব্যাপক চাহিদা। চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশ কফি আমদানি করে পূরণ করতে হয়। অথচ অনুকূল আবহাওয়ায় আমাদের তিন পার্বত্য অঞ্চলেও রয়েছে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা। যথাযথ উদ্যোগ নিলে আমদানির ৫০ ভাগেরও বেশি কফি দেশে উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
কফি চাষ এবং গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী পরিচালক ড. মো. আলতাফ হোসেন জানান, গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেশে ভালো মানের কফি চাষ সম্ভব। আর এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর কফি চাষ সম্ভব। সমতল অঞ্চলের সিলেট, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং শেরপুর জেলায়ও রয়েছে কফি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে পাহাড়ি এলাকাসহ সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলে কফি চাষ শুরু হয়েছে বলেও জানান ড. মো. আলতাফ হোসেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০১ সালে বিদেশ থেকে কিছু কফির গাছ আমদানি করে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র রাইখালীতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়। অল্প দিনেই কফি চাষে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। এরপর থেকেই তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কফি চাষ শুরু হয়। প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আলতাফ হোসেন ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাপ্তাই উপজেলার পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র রাইখালীতে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই অর্থবছরে দেশের ১১৮.৩ হেক্টর জমিতে কফির বিন উৎপন্ন হয়েছে ৫৫.৭৫ মেট্রিক টন। বর্তমানে তিনি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কফির চাষ বৃদ্ধিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পাহাড়ি এলাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ভ্রমণ করছেন আলতাফ হোসেন। তিনি জানান, পাহাড় এবং সমতল সব স্থানেই কফি চাষ করা সম্ভব। তবে পাহাড়ি উঁচু ও মধ্য উঁচু জমিতে সফলভাবে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু কফি চাষের অনুকূলে হওয়ায় উন্নত স্বাদ ও ঘ্রাণের কফি চাষ এখানে সম্ভব। কফি চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। অ্যারাবিকা কফি চাষের জন্য ১৫-২৪ ডিগ্রি এবং রোবাস্টা জাতের কফির জন্য ২৪-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা প্রয়োজন। যা আমাদের দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্যমান রয়েছে। কফি চাষ করে কৃষকসহ যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারবেন। দেশব্যাপী কফি চাষ ছড়িয়ে দেবার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কৃষক অথবা সাধারণ জনগণ কফি চাষে আগ্রহী হলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে কফি গাছের চারা এবং সার বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে বলে জানান প্রকল্প সমন্বয়কারী। তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকা কাপ্তাইয়ের পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র রাইখালী এবং খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কফি বাগানে মাত্র তিন বছর আগে রোপিত শতশত গাছে প্রচুর পরিমাণে কফি ধরে আছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও যুগ্ম সচিব একাধিকবার পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করেন। সমগ্র কফির বাগান ঘুরে ছোট ছোট গাছে থোকায় থোকায় ধরে থাকা কফি প্রত্যক্ষ করে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। কফি চাষে আগ্রহীদের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় উৎপাদন সহযোগিতা গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান প্রকল্প পরিচালক।