আকবরশাহ’র লেকসিটি, সুপারিবাগান ও গ্যাস লাইন এলাকায় পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। আগামী ২৩ ও ২৪ অক্টোবর এ তিন এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এছাড়া আকবরশাহ’র কালিরছড়া খালের স্থাপনাসহ ভরাট অংশ কেটে মুক্ত করা হবে। গতকাল পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯তম সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি বিষয়ক পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ কার্যক্রমে পিডিবি, ওয়াসা, গ্যাস, পুলিশ, সিটি করপোরেশন, সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা ও জেলা প্রশাসনসহ ১১টি সংস্থা সমন্বয় করবে। সভায় সভাপতিত্ব করেন পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। তিনি বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য একটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। ১১টি সংস্থার সমন্বয়ে এই অভিযান চালানো হবে।
উচ্ছেদ অভিযানের পরবর্তী তিন দিন পর ফের পর্যালোচনা সভা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো সুন্দর ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসবেন জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি কালিরছড়া খালের অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হবে। সভায় ওয়াসার প্রতিনিধি বলেন, জিকেএস নামের একটি এনজিও’র সাথে তাদের চুক্তি রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী নিম্ন আয়ের মানুষের পানি সরবরাহ করা হয়। এ বিষয়ে তার উদ্দেশ্যে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন বিভাগীয় কমিশনার। তিনি বলেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া এনজিও লাইন দিতে পারে? নিম্ন আয়ের লোক শুধু পাহাড়ে থাকে? রেলওয়ের জায়গায় রেলওয়ে কী লাইন দিতে বলেছে? উচ্চ আয়ের লোকই পাহাড়ে নিম্ন আয়ের লোক দিয়ে ইনকাম করে। সভায় উঠে আসে, শুধু আকবরশাহ এলাকাতেই ৪৬ টি গভীর নলকূপ রয়েছে। সভায় গত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংস্থাগুলো প্রতিবেদন দিয়েছে কী না অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. সাদি উর রহিম জাদিদ জানান, ওয়াসার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। বাকীদের পাওয়া যায়নি। বিভাগীয় কমিশনার সভায় বলেন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস লাইন দেওয়া যাবে না। লাইন দেওয়া থাকলে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সভায় পরিবেশবাদীরা বক্তব্য রাখেন। তারা পাহাড়ে বসতিদের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের অবৈধ সংযোগ রয়েছে বলে জানান। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা ৩০ হাজার টাকা নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেন জানিয়ে বলা হয়, ওয়াসা ও গ্যাস কোম্পানির লোকজনও টাকার বিনিময়ে সংযোগ দেন। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি সভায় বলেন, উচ্চ আদালতে রিট মামলার স্থাগিতাদেশের কারণে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না। নতুন করে আর কাউকে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। পিডিবি ও ওয়াসার প্রতিনিধির বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘মামলার বিষয়টি আগে জানানো হয়নি কেন? এটা অবৈধকে বৈধ করার শামিল। জমির মালিকানাসহ নানা ধরনের কাগজপত্র নিয়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ নিতে হয়। এখানে কীভাবে সংযোগ পায়? বিভাগীয় কমিশনার সভায় বলেন, পাহাড়ের কিছু কিছু এলাকায় আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। সেই স্থগিতাদেশ নিয়ে কাজ করতে হবে। পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সহযোগিতা করবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের পাহাড়ে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৫৮ টি পরিবার বসবাস করছে অবৈধভাবে। এরমধ্যে সরকারি পাহাড়ের পাশাপাশি রয়েছে ব্যক্তিগত পাহাড়ও।