আগামীকাল বিশ্ব পানি দিবস। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ ও প্রতিবেশের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ উপাদান পাহাড়ি ছড়া ও ঝিরি। দুর্গম পাহাড়ের বাসিন্দারা মূলত ছড়ার পানির উপর নির্ভরশীল। শুষ্ক মৌসুম আসলেই পানির প্রবাহ নষ্ট হয়ে মারা যায় অধিকাংশ ঝিরি ও ছড়া। ছড়ার আশপাশের নির্বিচারে গাছ কেটে পাহাড় ন্যাড়া করার কারণে বিনষ্ট হয়েছে পানির উৎস। ঝিরি ও ছড়ায় পানির প্রবাহ না থাকায় বিপাকে পরে স্থানীয়রা ।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার নয় মাইল এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গণেশ ত্রিপুরা বলেন, আমাদের পাড়ার নীচে বেতছড়ি ঝিরি রয়েছে। আট মাইল এলাকা থেকে ঝিরিটির উৎপত্তি হয়েছে। লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঝিরিটি মাইনী নদীতে গিয়ে মিশেছে। কিন্তু এখন দেখেন ঝিরিতে পানি একেবারে কমে এসেছে। সামনে বৈশাখ–জ্যৈষ্ঠ মাসে পানির প্রবাহ আরো কমে তা মৃতপ্রায় ঝিরিতে পরিণত হবে। তিনি আরো বলেন, ঝিরি শুকিয়ে যাওয়ার অন্যতম কাজ হলো প্রাকৃতিক বন কমে আসা। পাহাড়ে পাদদেশে ঘন বন থাকলে সেখানে পানির প্রবাহ শুষ্ক মৌসুমেও থাকে। কিন্ত এখানে প্রাকৃতিক বন তো নেই। প্রচুর সেগুন বাগান আছে। সেগুন পানি শোষণকারী বৃক্ষ। ফলে সেগুনের পাশে লাগোয়া ঝিরিগুলোতে পানির প্রবাহ কমে যায় বা একেবারে থাকে না।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা কবিতা ত্রিপুরা ও তপন ত্রিপুরা বলেন, ঝিরির উপর নির্ভর হয়ে যে সব পরিবারগুলো পানি সংগ্রহ করে। তারা এই সময়ে খুব বিপাকে পড়ে। অনেকে দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে আনতে হয়। ঝিরিগুলো বাঁচানো গেলে সারা বছরই পানির প্রবাহ থাকবে।’
পরিবেশবাদীরা বলছে, নির্বিচারে বন উজাড় এবং সেগুনসহ বিভিন্ন বিদেশী প্রজাতির গাছের মনোকালচারের কারণে ছড়া শুকিয়ে যাচ্ছে। বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটির সংগঠক সাথোয়াই মার্মা বলেন, যেখানে ঘন বন আছে সেখানে পানির প্রবাহ ভালো রয়েছে। ঝিরিগুলো মারা যাওয়ায় বেশি কষ্টে রয়েছে দুর্গম এলাকার মানুষেরা। তারা ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করে। বন উজাড় করে পাহাড় ন্যাড়া করার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এভারগ্রিন ফরেস্ট যদি ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে ঝিরি ছড়াগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, সাম্প্রতিকালে গাছপালা কেটে পাহাড় ন্যাড়া করে কৃষি কাজ করার পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করার প্রবণতা বেড়েছে। এতে মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। পুরো পাহাড় ন্যাড়া করে কৃষির আবাদ করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির চিরসবুজ বৃক্ষ দিয়ে বনায়ন করার জন্য বন বিভাগ সচেতনতা সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা ।
তিনি আরো বলেন, বন হচ্ছে পানির আঁধার। বনায়ন করতে দেশীয় মিশ্র প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। বিভিন্ন উঠান বৈঠকে আমরা মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছি। ভালো রেজাল্টও পাচ্ছি। তবে পুনরায় বন ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঝিরি ও ছড়ায় প্রাণ ফেরাতে প্রাকৃতিক বন পুনরুজ্জীবতকরণের দাবি পরিবেশবাদী ও স্থানীয়দের।