পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়নে কাজ করা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান’ প্রকল্পটি ১৫ মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে চালু হচ্ছে। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার পর দীর্ঘ ১৫ মাস কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সময়টাতে প্রকল্পটির আওতাধীন বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর লোকজন। এটি মূলত পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে পরিচালিত হতে থাকে। পাহাড়ের এসব পাড়াকেন্দ্রকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার বাতিঘর মনে করেন অনেকেই।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে পাহাড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সামাজিক সেবা প্রদান কার্যক্রম। এরপর প্রকল্পের কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা হয়। অবশেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রথম সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। চলতি অর্থবছরের ৩ মাস পর অর্থাৎ অক্টোবর থেকে প্রকল্পটি শুরু হওয়ায় ২০২৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পে শুরুতে তিন মাস পেছানোর কারণে প্রকল্পের কিছু সংশোধনী প্রক্রিয়া শেষে চালু হচ্ছে।
প্রকল্পটির অধীনে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৪ হাজার ৮০০টি পাড়াকেন্দ্র ছিল প্রথম পর্যায়ে। তবে নতুনভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হওয়া প্রকল্পের অর্গানোগ্রাম ও পাড়াকেন্দ্রের সংখ্যায় পরিবর্তন আসবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটির মধ্য দিয়ে পাহাড়ের গ্রামীণ এলাকায় চারটি আবাসিক বিদ্যালয় রয়েছে। যে বিদ্যালয়গুলোতে দুর্গম এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা পড়ালেখা করার সুযোগ পায়। এছাড়া শিশু, কিশোরী ও নারীদের নিয়ে পাড়াকেন্দ্রে সাক্ষরতা কর্মসূচি, নারীদের আয়রন ট্যাবলেট ও শিশুদের পুষ্টি সম্পন্ন বিস্কুট বিতরণ করা হয়। এছাড়া প্রকল্পটির অধীনে বিভিন্ন জরিপ কার্যক্রমও করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি আবারও চালু হওয়ায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও প্রান্তিক মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায় অনুমোদন হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্পটির বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা জিওবি ও ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা অর্থায়ন করবে ইউনিসেফ। চলতি বছরের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ।
জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস–চেয়ারম্যান (যুগ্ম সচিব) রিপন চাকমা দৈনিক আজাদীকে বলেন, চলতি বছরের অক্টোবর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হচ্ছে। সম্প্রতি একনেক সভায় প্রকল্পটি পাস হয়েছে। তবে এখনো প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা আসেনি। সরকারের নির্দেশনার পর মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বলেন, প্রকল্পটি পাস হলেও এখনো কিছু কার্যক্রম বাকি রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন হলে আমরা সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দেব।