রাঙামাটি–খাগড়াছড়ি জেলা নিয়ে বন বিভাগ রাঙামাটি অঞ্চল। বিগত কয়েক দশকে নির্বিচার বৃক্ষ নিধন, বনভূমি উজাড়ে পাহাড়ে ক্রমাগত সবুজের আচ্ছাদন কমে আসছে। ভূমিদস্যুদের দখলের কারণে ছোট হয়ে আসছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলও। সংরক্ষিত বন দখল ক্রমবর্ধমান হলেও উচ্ছেদ কার্যক্রম নেই বললেই চলে। পার্বত্য চট্টগ্রামের চির হরিৎ কাচালং সংরক্ষিত বনেও সবুজ কমে আসছে। বন বিভাগের হিসাবে, রাঙামাটি–খাগড়াছড়ির সাড়ে ১৫ হাজার সংরক্ষিত বন বর্তমানে বেদখলে।
বন সংরক্ষকের কার্যালয় রাঙামাটি অঞ্চলের তথ্য মতে, রাঙামাটি অঞ্চলের (রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি) অধীনে ছয়টি বন বিভাগের মোট ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯৮৬ দশমিক ৯৫ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৪০ একর, দক্ষিণ বন বিভাগের ২ লাখ ৩ হাজার ৮৮৮ একর, অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল বনীকরণ বিভাগের ১৩ হাজার ৪৪৫ একর, ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের ২৪ হাজার ৫৭৮ একর, কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের ৪৭ হাজার ৩৪ একর ও খাগড়াছড়ি বন বিভাগের ৬ হাজার ২ একর সংরক্ষিত বনভূমি আছে। সংরক্ষিত মোট বনভূমির ১৫ হাজার ৬৯২ ভূমিদস্যুসহ স্থানীয়দের কাছে দখলে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বনভূমি বেদখলে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের; বিভাগটির ৭ হাজার ৫৯২ একর বনভূমি দখলে আছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের ৬ হাজার ৩০৪ একর, ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের ১ হাজার ৭৪১ একর এবং খাগড়াছড়ি বন বিভাগের প্রায় ৫৪ একর বনভূমি দখলে রয়েছে। রাঙামাটির বন সংরক্ষকের কার্যালয় বলছে, অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল বনীকরণ বিভাগ ও কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের কোনো সংরক্ষিত ভূমি দখলে নেই।
রাঙামাটি অঞ্চলের অধীনে ছয়টি বিভাগের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বনভূমি রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের। মোট ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯৮৬ একর সংরক্ষিত বনভূমির মধ্যে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৪০ একর উত্তর বন বিভাগের। বাকি ২ লাখ ৯২ হাজার ১৪৬ একর রয়েছে পাঁচটি বিভাগের। রাঙামাটি–খাগড়াছড়ি জেলা নিয়ে বিস্তীর্ণ কাচালং সংরক্ষিত বনের ভেতরে রয়েছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার নাড়াইছড়ি, বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের কাচালং ও পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। উত্তর বন বিভাগের সবচেয়ে বেদখলে রয়েছে লংগদু উপজেলার ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী মৌজা এলাকায় দুই একর সংরক্ষিত বনভূমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বন বিভাগ। পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের পাবলাখালী রেঞ্জের রাঙ্গিপাড়া বিটের গুলশাখালী মৌজা এলাকার মাসুদ ও সিদ্দিকুর রহমান নামের দুজন স্থানীয় প্রভাবশালী দুই একর বন ভূমি বেদখলের উদ্দেশে স্থাপনা তৈরি করলে ভেঙে দেয় বন বিভাগ। ৭ মে একই রেঞ্জের চূড়াখালী মৌজায় আকাশমণি গাছের বাগানে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে এক একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ গত ৯ মে একই রেঞ্জের রাঙ্গিপাড়া মৌজায় ১০ একর সংরক্ষিত বনভূমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বন বিভাগ। সেখানে দুলাল হোসেন নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ৭–৮ বছর আগে বন বিভাগের আগর বাগান দখল করে খামারবাড়ি গড়ে তোলেন। উত্তর বন বিভাগের হিসাবে, চলতি বছরের শুরু থেকে ৯ মে পর্যন্ত মাত্র দখলে থাকা ১৩ একর সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধার করা হলো। যদিও বিভাগটির দখলে থাকা ভূমির পরিমাণ সাড়ে ৭ হাজার একরের বেশি।
উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ফরেস্টার পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের পাবলাখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা সজীব মজুমদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের অধীনে যেসব এলাকায় সংরক্ষিত বনভূমি দখলে রয়েছে, আমরা সেগুলো উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাবলাখালী রেঞ্জের ভেতরে দখলে থাকা ১৩ একর বনভূমি চলতি বছর উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছি। আমাদের এই উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও উপ–বন সংরক্ষক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, উত্তর বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমিও বেশি, আবার জবর দখলের পরিমাণও বেশি। কাচালং সংরক্ষিত বনের অধীনে রাঙামাটির লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বনভূমি বেদখলে রয়েছে। সাজেকের মাচালং, দীঘিনালার নাড়াইছড়ি, বাঘাইছড়ির পাবলাখালী বন– এগুলো কাচালং সংরক্ষিত বনেরই অংশ। উত্তর বন বিভাগের সাড়ে ৭ হাজারের অধিক একর বনভূমি বেদখলে রয়েছে। বিশেষ করে দেখা গেছে, যারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী তারাই সংরক্ষিত বন দখলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কেউ বন দখল করে তামাক ক্ষেত করছে, কেউ কেউ খামারবাড়িসহ ফলের বাগান করে তুলছে। আগে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও আমরা চলতি বছর থেকে সংরক্ষিত বনভূমিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমি উদ্ধার করা না গেলেও এই অভিযান চলমান থাকবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও বন বিভাগ রাঙামাটি অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মিজানুর রহমানের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।