‘আমরা ২৮, আমাদের বয়স বাড়ে না’। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাচ ২৮ এর খ্রিষ্টীয় নববর্ষ পালন উপলক্ষে আসর জমেছিল পাহাড় চূড়ায় সবুজের সমারোহে আমিন জুটমিল লিমিটেড এর বহাব্যবস্থাপক এর বাংলোয়। বন্ধুদের আড্ডা, পিঠা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শেষে নৈশভোজ–কী ছিল না তাতে। অনুষ্ঠান সন্ধ্যায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিকেল হতে বন্ধুদের আনাগোনা শুরু হয় টিলার ওপর বাংলোতে। বাংলোর একপাশে শীত তাড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে কাঠ–কড়ি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে।
বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা খাওয়ার সংস্কৃতি হাজার বছরের। এটা যতটা না খাওয়ার উৎসব তার থেকে বেশি বাংলার প্রাণের উৎসব। বর্তমান শহুরে প্রজন্ম বাঙালি সংস্কৃতির অংশ ঐতিহ্যবাহী এই পিঠাপুলির সাথে যেমন পরিচিত নয়, তেমনি তাদের আগ্রহও নেই। নাগরিক জীবনে চিরায়ত এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও সংগঠন শীতকালে পিঠা উৎসব করে থাকে। এই উৎসবের মাধ্যমে ফাস্টফুডে আসক্ত প্রজন্মকে সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব পিঠাপুলির স্বাদ নেওয়া ও পরিচয় করাতে সক্ষম হয়। প্রত্যেক দেশের কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার সে দেশের সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নিঃসন্দেহে পিঠা। আমাদের জন্য পিঠা শুধু একটি খাবারই নয়, স্মৃতির ভাণ্ডারও বটে।
পিঠা উৎসবে আয়োজন ছিল শীতকালীন ভাপা পিঠা, টক–ঝাল–মিষ্টি আচার ও চাটনি সহকারে চিতই পিঠা, ফুল ঝুড়ি। বাড়তি পাওয়া গরম গরম পেঁয়াজু। বিভিন্ন ধরনের পিঠাগুলো পিঠা তৈরীর কারিগররা তাৎক্ষণিক চাহিদার ভিত্তিতে তৈরী করে সবার হাতে দিচ্ছিল। পিঠা–পায়েসকে নিয়ে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এখনো অসংখ্য গান, কবিতা ও ছড়া প্রচলিত আছে। আমাদের অনুষ্ঠানও সন্ধ্যা থেকে জমে ওঠেছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান, ভাবের গান, আধুনিক গান ও গজল। একটার পর একটা গান চলছে। নৈশভোজেও ছিল বৈচিত্র্যময়। সাদা ভাতের সাথে শীতকালীন জনপ্রিয় ডিস হাঁসের মাংস, গরুর মাংস ও সীমের বিচির খাইস্যা। আনন্দ–উচ্ছ্বাস এর মাঝে সবচেয়ে লক্ষণীয় মানবিক উদ্যোগ। বিশেষ করে ব্যাচ এর প্রয়াত বন্ধুদের অসহায় পরিবারে আর্থিক সহায়তা, বিভিন্ন সমস্যা পতিত বন্ধুদের সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কার্যক্রম নিঃসন্দেহে বিভিন্ন সংগঠনের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। একে অপরের হাত ধরে বন্ধুত্বগুলো বেঁচে থাক সবসময়।