পাহাড় কেটে জলাধার ভরাট করছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ!

প্রকল্প এলাকায় কোনো পাহাড় কাটা হচ্ছে না : কউক

এম এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার | সোমবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে পাহাড় কেটে জলাধার ভরাট করছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প১’ এলাকায় ১০ দিন ধরে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়।

গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের পাশে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প১ এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পূর্ব পাশে বিশাল আকৃতির পাহাড়। বিভিন্ন গাছপালা ও জঙ্গলে ভরপুর পাহাড়ে লাগানো হয়েছে দুটি এস্কেভেটর। কউকের দুটি এস্কেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে পুরো একটা পাহাড়। প্রথম এস্কেভেটর পাহাড়ের চূড়া থেকে মাটি কেটে নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। আরেকটি এস্কেবেটর ট্রাকে তুলে দিচ্ছে মাটি। মাটিগুলো নিয়ে ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশে জলাধারে।

এ বিষয়ে আবাসন প্রকল্প এলাকায় সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাকর্মচারী কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিষয়টি তদারক করা সাইট ইঞ্জিনিয়ার মানিকের নম্বরে বারবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে তিনি মানিক নন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সেখানকার ঠিকাদার সাঈদ উল্লাহ রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন করছেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে কাটছেন পাহাড়। তিনি বলেন, পাহাড় কাটা তো আমাদের দ্বারা সম্ভব হবে না। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কাটা হচ্ছে পাহাড়। এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে বলেন তিনি।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প১ এর প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলে সেখানে কোনো পাহাড় কাটা হচ্ছে না। কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমাদের কেনা জায়গাটিতে কোনো পাহাড় ছিল না। একটা ছনখোলা উল্লেখ ছিল। এটিও ছনখোলা। একটা অংশে একটা টিলার মতো জায়গা আছে। কয়েক বছর ধরে বর্ষায় পাহাড়ের মাটি পড়ে ভবনের পার্কিং এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে এটা সমান করা হচ্ছে, যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেখানে স্লটটা ঠিক করে সিভিলাইজেশনের কাজ চলছে।

জলাধার ভরাটের বিষয়ে তিনি বলেন, জলাধার যেটি বলছেন ওই পাশের জায়গাটি আমাদের না। যদি ঠিকাদার সেখানে মাটি ফেলে থাকে তাহলে ভুল হতে পারে। সেটি আমরা গিয়ে দেখব। যদি জলাধার ভরাট করা হয় সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর (অব.) নুরুল আবছার বলেন, প্রকল্প এলাকায় কোনো পাহাড় কাটা হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের মধ্যে একটি ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলের পাহাড় রয়েছে, যা বর্ষাকালে মানুষের জীবনযাত্রার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ঝুঁকি কমাতে নারিকেলগাছ লাগানোর জন্য ওই অংশকে ৪৫ ডিগ্রি ঢাল করা হচ্ছে। সেখানে কোনো নির্মাণকাজ করা হবে না এবং পাহাড় ধস রোধে এ কাজ চলছে।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল আমিন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

পাহাড় কেটে জলাধার ভরাট করার নিন্দা জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম এরশাদ বলেন, পাহাড় কাটা সাধারণ মানুষের জন্য যেমন অন্যায়, সরকারি কর্মকর্তারা জেনেশুনে পাহাড় কাটলে সেটা আরো বেশি অন্যায়। বাপা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধ করে পাহাড় কর্তনকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার সাংবাদিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন
পরবর্তী নিবন্ধচবির হল থেকে অছাত্রদের বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত