পাহাড় কাটা বন্ধে এবার কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, তালিকা পূর্ণ করে মালিকদের নাম দিন। পাহাড় যখন কাটবে মালিককে গ্রেপ্তার করবেন, শ্রমিকদের নয়। দুজন মালিককে গ্রেপ্তার করবেন, দেখবেন পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। এই টম অ্যান্ড জেরি খেলা আর আমাকে দিয়ে খেলাবেন না।
প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা রাতে পাহাড় কাটে। রাত জেগে পাহারা দেবেন। এটা আপনার দায়িত্ব। এটা সরকারের আইন। ৯টা–৫টা অফিস কোনো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী করতে পারে না। কেউ বলতে পারবে না আমার অফিস টাইম ৯টা থেকে ৫টা। তাকে সব সময় প্রজাতন্ত্রের সেবায় থাকতে হবে। তিনি বলেন, মালিকদের নাম ধরে চট্টগ্রামের শীর্ষ পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞপ্তি দেবেন। এই দাগ–খতিয়ানে পাহাড় আছে, এগুলো কাটা যাবে না। তারপর চট্টগ্রাম শহরের কোথায় কোথায় পাহাড় আছে একটা স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করেন। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, বন বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ সব সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে এটা করতে হবে। চট্টগ্রামকে সাতটা ভাগে ভাগ করে ফেলেন। সাতটা কর্মকর্তা সাতটা ভাগের দায়িত্বে থাকবে।
তিনি বলেন, রাত দুইটার সময় এসএমএস আসে, আপা অমুক জায়গায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। আমি ঘুম ভাঙিয়ে তিনটার সময় সেটি পাঠাই। উনারা আবার লোক জোগাড় করতে করতে ছয়টা। পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে রাত ১১টায়, সাতটার মধ্যে পাহাড় কাটা শেষ।
তিনি বলেন, আপনি যদি গাছ কেটে ফেলেন, গাছ লাগাতে পারবেন। নদী দখল করে ফেললে দখলদার উচ্ছেদ করতে পারবেন। আপনাদের মধ্যে যদি কারও পাহাড় কেটে ফেলার পর পাহাড় সৃষ্টি করার জাদু থাকে তাহলে আমাকে বলে দেবেন। যদি জাদু জানা না থাকে তাহলে পাহাড় কাটতে দেওয়া যাবে না। সরকারি আইনে অপরিহার্য জাতীয় প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা নিষেধ। গত রোববার নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত পলিথিনবিরোধী এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
আসলে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না পাহাড় কাটা। অবিরাম চলছে পাহাড় কাটার যজ্ঞ। পাহাড় কেটে ছোট্ট পরিসরেই গড়ে তোলা হচ্ছে বসতি। অবৈধভাবে গড়ে উঠছে একের পর এক ঘর। এবিষয়ে প্রভাবশালীদের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতরের লোকজনও কম দায়ী নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। নিত্য নতুন এবং অভিনব কৌশলে কাটা হচ্ছে পাহাড়। প্রভাবশালীদের ধরন বদল হয়েছে, কিন্তু পাহাড় কাটার চিত্র একই রয়ে গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করেছে, জরিমানা করেছে। কিন্তু থামছে না পাহাড় কাটা। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারার নেপথ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাকেই বড় করে দেখেন পরিবেশবিদরা। তাঁরা বলেন, ক্ষমতাশালী লোক যদি পাহাড় কাটে তাহলে অধিদপ্তরের কতটুকুইবা করার মতো থাকে। তাই অধিদপ্তরের পদক্ষেপকে ছোট করে দেখাটা ঠিক হবে না।
পাহাড়খেকোদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে পাহাড়খেকোরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো সাবাড় হওয়ার শঙ্কা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। অভিযোগে প্রকাশ, পাহাড় বেষ্টিত চট্টগ্রামে একশ্রেণির প্রভাবশালী রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে বসতবাড়ি করছে। জলাশয় ভরাট এবং পাহাড় কাটা রোধে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা রোধে প্রয়োজন নাগরিকদের সমন্বিত উদ্যোগ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে সমাজের স্বার্থান্বেষী মানুষ আর বিগত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে বিলুপ্ত হয়েছে চট্টগ্রামের প্রায় ১৩০টির অধিক পাহাড়। আধুনিক সভ্যতার আধুনিকায়নে চট্টগ্রামের পরিবেশ যেন এক গুমোট বাঁধা নৈরাজ্যের সাক্ষী। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে নগরী এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। তাঁরা বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকায় জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন যার যার মত করে বিভিন্ন সময়ে অভিযান শুরু করে জরিমানার প্রক্রিয়া চালিয়ে আসলেও ফলশ্রুতিতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাই পাহাড় কাটা বন্ধে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি।