পাহাড় কাটা প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে

| শনিবার , ১ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, চট্টগ্রামে আর পাহাড় কাটা যাবে না। পাহাড় কাটলে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না। মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। আইনের মুখোমুখি করতে হবে তাদের। তখন আর কেউ পাহাড় কাটবে না। পাহাড় যদি না থাকে তাহলে চট্টগ্রামের পরিচয় কী থাকে।

২৬ ফেব্রুয়ারি নগরের জিমনেশিয়াম মাঠে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেউ যদি পাহাড় কাটে তাহলে জেলা প্রশাসককে জানানোর অনুরোধ জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। যদি জেলা প্রশাসক কাজ না করে তবে সিটি করপোরেশনের মেয়রকে জানাতে বলেন তিনি।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অন্য একটি অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা ও পরিবেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গবেষণার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে আয়োজিত ‘গবেষণা উদ্ভাবনা ও প্রকাশনা মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তাগিদ দেন। তিনি বলেন, আমাদের গবেষণা যেন কেবল একাডেমিক চর্চায় সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা বাস্তবসম্মত ও জনসম্পৃক্ত হতে হবে। গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে যদি পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণ করা যায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। গবেষণার মাধ্যমে মানবাধিকার, পরিবেশ ও জনসম্পৃক্ততার উন্নয়ন ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গবেষণা হবে বিজ্ঞানভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ এবং মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আমাদের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও গবেষণার প্রতি অধিক মনোযোগী হতে হবে।

আসলে আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি, বিভিন্ন স্থানে অবাধে পাহাড় কাটা চলছে। এই মাটি নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ট্রাক্টর বোঝাই করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। পাহাড় কাটার কাজ শুরুর আগে সেখানে অনেক গাছগাছালি ছিল। সেগুলো প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। তারপর তারা মাটি কেটে নিয়ে যায়। পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা চলছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন পাহাড় কাটা বন্ধে কোনো ভূমিকা রাখছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। পাহাড় কাটার কারণে বেশ কিছু বনজঙ্গল কাটা পড়েছে। ন্যাড়া হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পাহাড়ের বিশাল এলাকা। এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। ভূমিধস আমরা দেখেছি, দেখেছি মৃত্যুর সারি। আগামীতে আরো ঘটতে পারে মারাত্মক ভূমিধস। কালের বিবর্তনে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনজ সম্পদের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। দেশে বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২৬ লাখ হেক্টর। দেশের মোট আয়তনের প্রায় শতকরা ১৭ দশমিক ৬২ ভাগ বনভূমি। অবৈধভাবে নির্মিত ঘরবাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে পাহাড়ে প্রাণহানির মতো দুঃখজনক ঘটনা রোধ করতে হবে। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় ভিজিলেন্স বাড়ানোর জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পাহাড় কাটা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারার নেপথ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাকেই বড় করে দেখেন পরিবেশবিদরা। তাঁরা বলেন, ক্ষমতাশালী লোক যদি পাহাড় কাটে তাহলে অধিদপ্তরের কতটুকুইবা করার মতো থাকে। তাই অধিদপ্তরের পদক্ষেপকে ছোট করে দেখাটা ঠিক হবে না।

তবে পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে তেমন উল্লেখযোগ্য অভিযান নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেসব ঘটনা গণমাধ্যমে আসে সেগুলোতেই অভিযান চালানো হয়। এর বাইরে আরো অনেক জায়গায় পাহাড় কাটা চলছে। জরিমানা করেই তারা দায়িত্ব শেষ করে। এরপর পাহাড়কে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয় সেটা অপূরণীয়। তাঁরা বলেন, পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস চলতে থাকলে ভবিষ্যতে করোনার চেয়ে আরো বড় মহামারি এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহ ফলাফল অপেক্ষা করছে। সে জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরো কঠোর হতে হবে। প্রয়োজন পাহাড় রক্ষায় টানা অভিযান। পাশাপাশি প্রভাবশালীদের বিষয়ে দৃঢ় ভূমিকা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে