পাহাড় ও খাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

আকবর শাহ লেক সিটি ও সুপারি বাগান এলাকায় ৯ সংস্থার সমন্বয়ে অভিযান । পাহাড়খেকোদের বাধা, পরিবেশ কর্মীকে মারধর । আজও চলবে অভিযান

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর আকবর শাহ থানাধীন হারবাতলী থেকে উজানের দিকে কালীর ছড়া খালের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এ সময় ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডেইরি ফার্ম, গুদাম ঘর, আবাসিক প্লটের সীমানা দেয়াল ও দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের পাকা স্থাপনা।

গতকাল সকালে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কালীর ছড়া খালের অবৈধ দখলদার ও পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা লেক সিটি ও সুপারিবাগানের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের একপর্যায়ে দুপুর ১ টার দিকে হারবাতলী এলাকায় অভিযান পরিচালনাকারী টিমকে বাধা দেন পাহাড় খেকো একটি দল। তারা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্থানীয় এক পরিবেশ কর্মীর ওপর চড়াও হন। শফিকুল ইসলাম নামের ওই পরিবেশ কর্মীকে মারধরও করা হয়। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির সাথে কাজ করেন। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানানো হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড আরাফাত সিদ্দিকী। এছাড়া অভিযানের সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদিউর রহিম জাদিদ। সহযোগীতায় ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, পিডিবি, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, বাপা, বেলাসহ বিভিন্ন সংস্থা। গত ১৭ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক সভায় আকবরশাহ থানাধীন লেক সিটি ও সুপারি বাগান এলাকায় অভিযানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম সভায় সভাপতিত্ব করেন।

কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড আরাফাত সিদ্দিকী দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আকবরশাহ থানার লেক সিটি ও সুপারি বাগান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে হারবাতলী থেকে উজানের দিকে কালীর ছড়া খালের প্রায় এ কিলোমিটার অংশ অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এ সময় ছোট বড় বিভিন্ন ধরণের প্রায় ৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডেইরি ফার্ম, গুদামঘর, আবাসিক প্লটের সীমানা দেয়াল ও দোকানসহ বিভিন্ন ধরণের পাকা স্থাপনা। আগামীকালও (আজকে) একই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পাহাড় কেটে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা অবশ্যই উচ্ছেদ করা হবে। সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রশ্নের উত্তরে ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত সিদ্দিকী বলেন, অভিযানের একপর্যায়ে হারবাতলী এলাকায় ৭০ থেকে ৮০ জন লোক জড়ো হয়ে অভিযানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদেরকে আমি বুঝাচ্ছিলাম। একটু দূরে শফিকুল ইসলাম নামের একজন পরিবেশকর্মী মারধরের শিকার হয়। হঠাৎ করে জড়ো হওয়া লোকজন তার দিকে তেড়ে যায় এবং তার সাথে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। শফিকুল ইসলামকে কিল ঘুষি মারার ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান তিনি।

তবে আর কেউ এ ঘটনায় আহত হননি জানিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আরো বলেন, যারা অভিযান পরিচালনাকারী টিমের উপর চড়াও হয়েছেন এবং একজনকে মারধর করেছেন তাদের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখছেন। তাদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আকবরশাহ থানার ওসি জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ করছেন বলেও ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত সিদ্দিকী জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদিউর রহিম জাদিদ আজাদীকে বলেন, লেক সিটি ও সুপারি বাগান এলাকা আপাতত আমাদের টার্গেট। আমরা এ দুটি এলাকা দখলমুক্ত করতে চাইছি। ১২ টি সংস্থার সমন্বয়ে আমাদের এ অভিযান। সরকারের খাস জমি রয়েছে। আমরা সেগুলো উদ্ধার করব। অন্যান্য সংস্থাগুলোর জায়গা তারা বুঝে নিবে এবং সংরক্ষণ করবে। তিনি বলেন, আজকে (গতকাল) আমরা প্রথম দিনের অভিযান সমাপ্ত করেছি। আগামীকাল (আজকে) আবারও একই এলাকায় অভিযান চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘বড়ভাইদের নির্দেশে’ ছাত্র আন্দোলনে গুলি, ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধসাজ্জাদসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা