জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা মনে করি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশে সকল সমপ্রদায় আমরা একসাথে মর্যাদা নিয়ে সহনাগরিক হিসেবে বসবাস করতে পারব। সে রকম একটি রাষ্ট্র, বাংলাদেশ আমরা চাই। আমরা দেখেছি গত ৫০ বছরে বাংলাদেশকে নানাভাবে বিভাজিত রাখা হয়েছিল এবং এর বড় শিকার হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা বিভাজন, নানা অশান্তি জিইয়ে রেখে অন্য একটি পক্ষ বারবার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে, আমরা তৃতীয় কোনো পক্ষকে সুবিধা নিতে দেব না। আমাদের মধ্যে নিজের যদি কোনো সমস্যা থাকে, সমপ্রদায়ের মধ্যে যদি সমস্যা থাকে, আমরা নিজেরা বসে এটার সুরাহা করব, সমাধান করব। কিন্তু অন্য কোনো পক্ষকে সুযোগ নিতে দেব না। সকলে মিলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ গতকাল রোববার দুপুরে রাঙামাটি জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপা টেক্সি–অটোরিকশা স্ট্যান্ডে জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ এর রাঙামাটির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। সমাবেশে এনসিপি রাঙামাটি জেলার প্রধান সমন্বয়কারী বিপিন জ্যোতি চাকমার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্ত শারমিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ। সমাবেশে বক্তব্যকালে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বান্দরবানের সমাবেশে ‘অসংগতিপূর্ণ’ বক্তব্য দেয়ার কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
সমাবেশে এনসিপির শীর্ষনেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ৭২ এর যে সংবিধানের বিরুদ্ধে আমরা বলে আসছি, যে মুজিববাদী সংবিধানে সকল জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে অবাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এখানে বিভেদ তৈরি করে রাখা হয়েছে।ধর্ম–নিরপেক্ষতাবাদের নামে ইসলামের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিভেদ তৈরি রাখা হয়েছিল। আমরা সকল বিভেদের ঊর্ধ্বে গিয়ে সকল জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সংবিধান তৈরি করতে চাই। আপনাদের রাঙামাটির নেতা এমএন লারমা (মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা) সেই বাহাত্তরের সংবিধানের বিরোধিতা করেছিলেন। আমরা চাই সেই মুজিববাদী সংবিধানকে বাতিল করে নতুন একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান আপনি–আমি মিলে বসে নতুন একটি চুক্তি আমরা তৈরি করব, যেখানে আপনার অধিকারও থাকবে আমার অধিকারও থাকবে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, পাহাড়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, বমসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠী ভাষা, তাদের ধর্ম ভূমির অধিকার নিয়ে লড়াই করছে। অন্যদিকে যে বাঙালি জনগোষ্ঠী রয়েছে তারাও নানান সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সকল জনগোষ্ঠীই এখানে নির্যাতিত অধিকারহীন। আমাদের লড়াইটা একসাথেই এখানে করতে হবে, কাউকে বাদ করা যাবে না। আমরা সেই ঐক্য, সমপ্রীতি সহানুভূতির কথা বলতে এখানে এসেছি।
এর আগে, এদিন বেলা ১টার পর এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা গাড়িবহর নিয়ে জেলা শহরের শিল্পকলা একাডেমি এলাকায় পৌঁছান। সেখানে স্থানীয় নেতারা তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর বেলা সোয়া ১টার দিকে শিল্পকলা একাডেমি এলাকা থেকে ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হয়। পদযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বনরূপা টেক্সি–অটোরিক্সশা স্ট্যান্ডে এসে সমাবেশ করে। সমাবেশে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এনসিপির নেতাকর্মী–সমর্থকরা যোগ দেন।
এদিকে, এনসিপির সমাবেশকে ঘিরে রাঙামাটিতে কোনো সভা–সমাবেশকে কেন্দ্র করে স্মরণকালের নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে দুপুরে এসএসসি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীরা বাড়ি ফেরার পথে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা ঘটে। এটাকে কেন্দ্র করে বনরূপা এলাকায় এনসিপির সমাবেশ চলাকালে জড়ো হয়ে স্লোগান দেন জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, জুলাই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে এই প্রথম এনসিপির বড় কোনো সমাবেশ অনুষ্ঠিত হল।