পারল না চিটাগাং, বরিশাল চ্যাম্পিয়ন

বড় সংগ্রহের পরও তীরে এসে তরি ডুবল কিংসের তামিমের বরিশাল ঘরে তুলল টানা দ্বিতীয় শিরোপা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

১১ বছর পর বিপিএলে এসে নানা চড়াইউতরাই পেরিয়ে ফাইনালে এসেছিল চিটাগাং কিংস। তাদের সামনে ছিল ইতিহাস গড়ার হাতছানি। কিন্তু সেটা আর হলো না। এর আগে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ফাইনালে উঠেছিল চিটাগাং কিংস। কিন্তু সেবারও ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়েছিল তাদের। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ১১ বছর পর। আরো একবার বিপিএলের ফাইনালে তীরে এসে তরি ডুবল চিটাগাং কিংসের। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মেগা ফাইনালে চিটাগাং কিংসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতে রেকর্ড গড়ল তামিম ইকবাল এবং তার দল ফরচুন বরিশাল। গতকালের ফাইনালটা বরিশাল এবং চট্টগ্রামের মধ্যে হলেও আসল লড়াইটা দুই চাটগাঁইয়ার মধ্যে। অভিজ্ঞ এবং জাতীয় দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া তামিম ইকবালের সাথে লড়াইটা হয়েছে তরুণ এবং সবে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া পারভেজ হোসেন ইমনের। যেখানে ইমন খেলেছেন ৪৯ বলে ৭৮ রানের ইনিংস। আর তামিম ২৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংস। তামিমের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলো তরুণ ইমনকে। সে সাথে তার দল চিটাগাংকেও।

বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টের ফাইনাল যেমনটি হওয়া উচিত ঠিক তেমনই হয়েছে। গ্যালারি ভর্তি দর্শক, দুই ইনিংসে চারশর কাছাকাছি রান, ব্যাটারদের ঝড় যেমন দেখেছে দর্শকরা তেমনি দেখেছে বোলারদের দাপটও। সবমিলিয়ে দুর্দান্ত এক ফাইনালে শেষ হাসিটা তামিম ইকবালের। নিজে যেমন ব্যাট হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তেমনি দলের অন্যদের কাছ থেকে বের করে এনেছেন সেরা খেলাটা। আর সে কারণেই এখানে অনন্য তামিম। দল গঠনে যেমন দক্ষতা আর মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছিল বরিশাল, তেমনি মাঠের লড়াইয়েও নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিয়েছে। যার ফল পেয়েছে দিন শেষে শিরোপা জিতে। আর মাঠের চাইতে মাঠের বাইরে বেশি আলোচনায় থাকা চিটাগাং কিংস শিরোপার একেবারে কাছে চলে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরতে হলো ব্যর্থ মনোরথে খালি হাতে।

টসে হেরে ব্যাট করতে নামা চিটাগাং কিংস দুর্দান্ত শুরু করে দুই ওপেনার খাজা নাফি এবং পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাটে। শুরু থেকেই বরিশালের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে দুজন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৫৭ রান তুলে নেন দুজন। এরপর দ্রুত ঘুরাতে থাকেন রানের চাকা। মাত্র ৬৬ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন দুজন। এরপর আরো দ্রুত ঘুরতে থাকে চিটাগাং কিংসের রানের চাকা। তবে নাফির আগে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমন। ৩০ বলে ৬টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমন। এর পরপরই খাজা নাফি হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৩৭ বলে। ১২১ রানে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। ৪৪ বলে ৬৬ রান করা নাফিকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন এবাদত হোসেন। দ্বিতীয় উইকেটে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেন ইমন এবং গ্রাহাম ক্লার্ক। এজুটিতে দুজন যোগ করেন মাত্র ৪০ বলে ৭০ রান। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্লার্ক ফিরেন ২৩ বলে ৪৪ রান করে। এক বল পর ফিরেন শামীম হোসেন। শেষ ওভারে আসে ৬ রান। ফলে ১৯৪ রানে থামে চিটাগাং কিংস।

১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটাও দারুণ করেছিল বরিশালের দুই ওপেনার তামিম এবং হৃদয়। ৪৯ বলে ৭৬ রান করে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। ২৯ বলে ৯টি চার এবং ১ ছক্কায় ৫৪ রান করা তামিমকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন শরিফুল। যার উপর দলের ভরসা সবচাইতে বেশি সেই ডেভিড মালান করলেন হতাশ। মাত্র ১ রানে শরিফুলের বলে ফিরেন এই ইংলিশ ব্যাটার। নিজের প্রথম ওভারে বল হাতে নিয়ে বরিশালকে বড় ধাক্কা দিলেন নাইম ইসলাম। তিনি ফেরালেন তাওহিদ হৃদয়কে। প্রথম কোয়ালিফায়ারে দুর্দান্ত ইনিংস খেলা হৃদয় ফাইনালে পারলেন না দায়িত্ব নিতে। ফিরলেন ২৮ বলে ৩২ রান করে। চ্যাম্পিয়নদের দায়িত্ব তখন কাইল মায়ার্স এবং মুশফিকের কাঁধে। কিন্তু মুশফিকও পারলেন না দায়িত্ব নিতে। নাইম ইসলাম নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফেরালেন মুশফিককে। ৯ বলে ১৬ রান করে ফিরলেন মুশফিক খাজা নাফির হাতে ক্যাচ দিয়ে।

ধীরে ধীরে ম্যাচ যেন কঠিন হয়ে উঠছে বরিশালের জন্য। তবে কাইল মায়ার্স বেশ ভালই টানছিলেন দলকে। ক্রমশ কমিয়ে আনছিলেন বলের সাথে রানের ব্যবধান। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৪২ রান যোগ করে ফিরেন মায়ার্স। শরিফুলের বলে মার্শাল আইয়ুবের হাতে ক্যাচ দেন মায়ার্স ২৮ বলে ৪৬ রান করে। মেরেছেন ৩টি করে চার আর ছক্কা। একই ওভারে মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আবার নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন শরিফুল। তবে রিশাদ হোসেন নেমে এক ছক্কায় আবার ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। শেষ ওভারে বরিশালের দরকার ছিল ৮ রান। হুসাইন তালাতের করা ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দেন রিশাদ। পরের বলে এক রান নেন রিশাদ। তৃতীয় বলটা ডট হলেও চতুর্থ বলে এক রান নিয়ে শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতেন রিশাদ, তানভীর এবং পুরো বরিশাল দল। ৬ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত থাকেন জয়ের অন্যতম নায়ক রিশাদ হোসেন। চিটাগাং কিংসের শরিফুল ৩৪ রানে ৪ উইকেট নিলেও শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৯৪৮ সালের মার্চ থেকেই প্রতিরোধ অব্যাহত থাকে
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচন হতে পারে বছরের শেষ দিকে : প্রধান উপদেষ্টা