রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার বাহিনীর পারমাণবিক অস্ত্রের বহরকে ‘বিশেষ সতর্ক’ অবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। রাশিয়ার কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বহরের জন্য এটাই সর্বোচ্চ স্তরের সতর্ক অবস্থা বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চতুর্থ দিনে এসে বেলারুশের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনার একটি উদ্যোগ জোর পেয়েছে। বেলারুশ সীমান্তের গোমেল এলাকায় স্থানীয় সময় সোমবার সকালে এ বৈঠক হবে বলে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইভগেনি ইয়েনিন জানিয়েছেন।
গতকাল রোববার টেলিভিশনের এক ভাষণে রুশ বাহিনীর জ্যেষ্ঠ জেনারেলদের উদ্দেশে পুতিন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার প্রতি বৈরী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বেআইনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর কেবল পশ্চিমারাই নয়, নেটোর নেতৃস্থানীয় দেশগুলোও রাশিয়াকে নিয়ে আগ্রাসী বক্তব্যে সামিল হয়েছে উল্লেখ করে পুতিন বলেন, এ কারণেই তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং চিফ অব জেনারেল স্টাফকে তার বাহিনীর পারমাণবিক অস্ত্রের বহরকে যুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত থাকার আদেশ দিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই পদক্ষেপকে পুরোপুরি অগ্রহনযোগ্য বলে বর্ণনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড সিবিএস নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, পুতিন এমনভাবে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়াচ্ছেন যা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদেরকে খুবই তীব্র এবং কড়া ভাষায় এই পদক্ষেপের নিন্দা করে যেতে হবে।
আলোচনায় রাজি ইউক্রেন ও রাশিয়া : বিডিনিউজের খবর থেকে জানা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে এ বিষয়ে তার টেলিফোনে কথা হয়েছে। আমরা একমত হয়েছি যে, ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল বিনা শর্তে ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তে প্রিপায়াত নদীর কাছে রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের বৈঠকে বসবে। আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দায়িত্ব নিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের যাওয়া, আলোচনায় অংশ নেওয়া এবং ফেরার পুরো সময়ে বেলারুশে থাকা সব যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার ও মিসাইল সিস্টেমকে নিশ্চল রাখা হবে।
রুশ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদিনস্কির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, সে দেশের প্রতিনিধি দল ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইতোমধ্যে বেলারুশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গোমেলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
রাশিয়ার ৪৩০০ সেনা নিহতের দাবি ইউক্রেনের : চার দিনে রাশিয়ার প্রায় চার হাজার ৩০০ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার গতকাল রোববার ফেসবুকে এক পোস্টে এ দাবি করেন। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে বলা হয়েছে, তারা স্বাধীনভাবে ওই তথ্য যাচাই করতে পারেনি। রাশিয়াও এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
ফেইসবুকে পোস্টে হান্না মালিয়ার রাশিয়ার ১৪৬টি ট্যাংক, ২৭টি বিমান এবং ২৬টি হেলিকপ্টার, ৭০৬টি সাঁজোয়া যান, ৪৯টি কামান এবং আরও কিছু সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র ধ্বংসের দাবিও করেছেন।
কিয়েভে রুশ সেনা নেই, খারকিভ নিয়ন্ত্রণে : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়র বলেছেন, শহরে কোনো রুশ সেনা নেই। ওদিকে, খারকিভের আঞ্চলিক গভর্নর বলেছেন, ইউক্রেনের বাহিনী নগরের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো বলেন, সেনাবাহিনী, আইন-শৃক্সখলা বাহিনী এবং আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর নগরীতে শত্রুদের খুঁজে বের করে তাদের বিনাশ করে চলেছে।
ইউরোপের আকাশে নিষিদ্ধ হচ্ছে রাশিয়া : ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ রাশিয়ার ওপর আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে জার্মানি ও বেলজিয়ামসহ বেশ কয়েকটি দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইউরোপের বাকি দেশগুলোও তাদের কাতারে সামিল হতে চলেছে বলে রোববার জানিয়েছে বিবিসি।