পারকি সৈকতের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন

জনপ্রিয় বিনোদন স্পটের বিবর্ণ দশা, উন্নয়ন সম্ভাবনার কথা শুনতে শুনতে ত্যক্ত-বিরক্ত স্থানীয় ও পর্যটকরা

এম.নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | শনিবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী টানেল চালুর অনেক আগে থেকেই পারকি সৈকতকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন স্পট হিসাবে গড়ে তুলতে স্থানীয় ও পর্যটকদের দাবি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বছরের পর বছর বিবর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা পারকি সৈকতের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্থানীয় ও পর্যটকদের মাঝে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। টানেল চালুর পর পারকি সমুদ্র সৈকতের পর্যটন সম্ভাবনা বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু গত এক বছরেও সম্ভাবনাময় পারকি সৈকত পর্যটকদের কাছে টানতে পারেনি। অথচ টানেলের টোল বাড়াতে পারকি সমুদ্র সৈকত বড় ভূমিকা রাখতে পারে। চট্টগ্রাম শহরের লাগোয়া এ বিনোদন কেন্দ্রটি পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় বিনোদন স্পট। কিন্তু এই সমুদ্র সৈকতের বিবর্ণ দশার কোনো পরিবর্তন নেই। সৈকতে প্রবেশের রাস্তা, থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, বিনোদন অনুষঙ্গ সব কিছুতেই দৈনদশা। যার কারণে এ সৈকতের জনপ্রিয়তা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

সৈকতের শোভা বর্ধনকারী ঝাউ বাগানের সারিও অনেকটা নিঃশেষ হয়ে গেছে যথাযথ পরিচর্যা ও দেখভালের অভাবে। পারকি সৈকতের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে এলাকাবাসী হতাশ। ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পর্যটন কমপ্লেক্সটির কাজের মান নিয়ে শুরু থেকেই অভিযোগ। তিন দফা মেয়াদোত্তীর্ণের পর ঠিকাদার এখনো কাজ শেষ করতে পারেনি। এলাকাবাসী আর আশ্বাস নয়, বাস্তব উন্নয়ন দেখতে চান।

পারকি সৈকতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে শত শত ঝাউ গাছ বিলীন হচ্ছে। নানা অব্যবস্থাপনায় দিন দিন পর্যটক শূন্য হচ্ছে এ সৈকত।

স্থানীয়রা জানান, কর্ণফুলী টানেল চালুর পর পারকি সৈকতের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। টানেল দেখতে এসে পারকিতে বেড়াতে আসেনি এমন পর্যটক কমই আছে। কিন্তু সৈকতে পর্যাপ্ত পর্যটন সুবিধা না থাকায় দর্শনার্থীরা হতাশা হয়ে ফিরে যান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সৈকতের চরে বালির নীচে থাকে মদের বোতল বা ইয়াবা, নানা কৌশলে এসব দ্রুত হাত বদল হয়। বখাটেদের উৎপাত লক্ষ্যণীয়।

উজ্জ্বল সম্ভাবনার পারকি সৈকত এখনো বাস্তবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে পারকি সৈকতের যে সব উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা শোনা যায় সেগুলোও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের পর ৫ মাসে পারকি সৈকতে পর্যটকের আগমন কয়েক গুণ বাড়লেও পরবর্তী ৮ মাসে ব্যাপক হারে কমে গেছে। পারকি বীচের প্রধান সড়কটিই হচ্ছে এখনো সরু রাস্তা। যার কারণে পড়তে হয় যানজটে। সৈকতে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য নির্মিত ৪টি সড়কের বেহাল দশা। সড়কগুলো দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সৈকতের বড় কয়েকটি সমস্যার মধ্যে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাও একটি। সৈকতের নির্ধারিত গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থার জায়গাটিও খুব ছোট। যার কারণে বাধ্য হয়ে পর্যটকদের গাড়ির পার্কিং করতে হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানা জায়গা বা মূল সড়কের উপর। সৈকতে নেই কোনো নিরাপত্তাকর্মী।

সমপ্রতি বেশ কয়েকটি ওয়াশরুম করা হলেও ময়লা আবর্জনায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া নেই কোনো আবাসন সুবিধা, সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ভূতুড়ে পরিস্থিতি নেমে আসে। মাদক আর চাঁদাবাজের দৌরাত্ম্য বেড়েছে অনেক গুণ। এদিকে ৭৯ কোটি টাকার পরিকল্পনায় নির্মিত পর্যটন কমপ্লেঙটির কাজ শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দেয়া হলেও কয়েক দফা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এর পরও ধীর গতিতে চলছে কাজ। কাজের মান নিয়ে রয়েছে সর্ব মহলের প্রশ্ন। মানসম্মত কাজ না হওয়ায় সর্ব মহলে ক্ষোভ ও রয়েছে।

পারকিতে বেড়াতে আসা পর্যটক জাহিদ বলেন, পারকি সৈকতের বিনোদনের মূল উপকরণ হচ্ছে ঝাউ গাছ। অথচ গাছগুলো দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবকিছুতে ঘাটতি আছে। স্থানীয়রা পারকির উন্নয়ন সম্ভাবনার কথা শুনতে শুনতে ত্যক্তবিরক্ত। এলাকাবাসী কথা নয় পারকির বাস্তব উন্নয়ন দেখতে চান।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার জানান, পারকি সমুদ্র সৈকতের উন্নয়নে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় একগুচ্ছ উন্নয়ন পরিকল্পনা শুরু হচ্ছে। পারকি সৈকতকে জনপ্রিয় করে তুলতে উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজনৈতিক দলগুলো ৫৩ বছরেও রাষ্ট্রের সংস্কার কেন করেনি, প্রশ্ন রিজওয়ানার
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা