পারকি সৈকতে বিপন্ন পরিবেশ

আটকে পড়া জাহাজে জমছে পলি বিলীন হচ্ছে ঝাউবন

আনোয়ারা প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৮ জুন, ২০২১ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলীর মোহনায় অবস্থিত আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত। এ সৈকতের পরিচিতি রয়েছে সারা দেশে। পর্যটন শিল্পের প্রসার ও জনপ্রিয়তা বিবেচনায় পারকির উন্নয়নে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে চলছে ৬৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও হাজারো পর্যটকে মুখরিত থাকে পারকি। এই সৈকতের মূল সৌন্দর্য সারি সারি ঝাউ গাছ। কিন্তু ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় মোড়ায় ভেসে আসা ক্রিস্টেল গোল্ড জাহাজ সৈকতে আটকা পড়লে পরিবর্তিত হয়ে যায় জোয়ারের পানির গতিপথ। এ কারণে ৪ বছর ধরে বালির স্তর সরে গিয়ে পলি মাটিতে ভরে গেছে সৈকত।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জোয়ারের প্রভাবে কয়েকশ ঝাউ গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিলীন হচ্ছে ঝাউ বন।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক মফিদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোড়ায় ভেসে আসা জাহাজ ক্রিস্টেল গোল্ড আটকে গেলে পারকি সৈকত বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিধিনিষেধ অমান্য করে জাহাজটি কাটতে যায়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিমানার আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পরবর্তীতে আপিল বিভাগও জরিমানা বহাল রাখে। এরপর হাই কোর্টে আবারো রিটের আপিল করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে মামলাটি ঝুলে আছে।
মফিদুল ইসলাম বলেন, বতর্মানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আদালতের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরে ২ কোটি টাকা জামানত রেখে জাহাজটি কাটতে চায়। এ বিষয়ে করণীয় জানতে অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বনবিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পারকি সমুদ্র সৈকতে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ১২ হেক্টর জায়গায় ঝাউ বন গড়ে তোলা হয়। এরপর ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে ১৭ দশমিক ২ হেক্টর, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৫ হেক্টর ও ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৫ হেক্টর জায়গায় ঝাউ বাগান করা হয়। চার ধাপে মোট ৩৯ দশমিক ২ হেক্টর বা ৯৭ একর সৈকতে ঝাউগাছ লাগানো হয়েছে। এই সবুজ বেষ্টনী সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা করে থাকে।
চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বন্দর বিট কর্মকর্তা মো. হান্নানুজ্জামান জানান, অনুকূল পরিবেশ আর জোয়ারের পানির প্রভাবে ঝাউ গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে উপড়ে পড়া গাছগুলো চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই এসব গাছ নিলামে বিক্রি করা হবে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পারকি সমুদ্র সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, পারকি সৈকত রক্ষা করতে হলে জাহাজটি অবশ্যই সরাতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জাহাজটির প্রভাবে সৈকতের বালুচরে পলি মাটি জমে গেছে। ঝাউ বাগান উজাড় হয়ে সৌন্দর্য হারাচ্ছে সৈকত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমালয়েশিয়ায় ৬২ বাংলাদেশিসহ আটক ১৫৬
পরবর্তী নিবন্ধকরোনায় মৃত্যু কমলেও শনাক্ত বেড়েছে