পানির জন্য রোজ হাঁটতে হয় দুই কিলোমিটার পাহাড়ি পথ!

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়, ঝিরি-ঝর্ণা, উপত্যকা, নদী এবং বিস্তৃত অরণ্য নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাহাড়ে বসবাসরত বাসিন্দাদের আরেক কষ্টের নাম সুপেয় পানি সংকট। সারা বছর এই সংকট থাকলে শুষ্ক মৌসুমের ফাল্গুন থেকে চৈত্র এই সময়ে সংকট আরো তীব্র হয়। পানির জন্য ঝিরি-ঝর্ণার ওপর নির্ভরশীল মানুষের কষ্ট বহুগুণ বেড়ে যায়। কারণ শুকিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানি থেকে তাদের বঞ্চিত হতে হয়।
ভোর হলেও পানি সংগ্রহের সংগ্রাম শুরু হয়। খাগড়াছড়ি দীঘিনালা সড়কের পাশে লাগায়ো নয় মাইল এলাকায় প্রায় ১১টি পাড়ায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট চলছে। পাড়ার নীচে ঝিরি থেকে সংগ্রহ করতে হয় খাওয়া ও রান্নার পানি। তীব্র কষ্টে পানি জুটলেও তা নিরাপদ নয়। বাধ্য হয়ে অপরিষ্কার পানি সংগ্রহ করতে হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নয় মাইল এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট চলছে। এর মধ্যে বেশি সংকট রয়েছে রথীচন্দ্র কার্বারি পাড়ায়। দুর্গম এই পাড়ার বাসিন্দাদের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়। একই চিত্র নয় মাইল এলাকার তপন কুমার কার্বারি পাড়া, সীমানা পাড়া, কালীদাস কার্বারি পাড়া, তৈদুপাড়া, মায়াপাড়া, ভৈরফা পাড়া, সাধন মনি পাড়া, গন্ডা পাড়া ও ফরেস্ট বাগান টিলা এলাকায়। এর মধ্যে নয়মাইল যৌথ খামার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানির জন্য পাহাড়ের নীচে নামছে পাড়ার বাসিন্দা মনু ত্রিপুরা (২২), বাবলি ত্রিপুরা (১৯), প্রতিনা ত্রিপুরা (২২), তুনা ত্রিপুরা (১৪)। কুয়া থেকে পানি সংগ্রহের জন্য পাড়া থেকে হেঁটে প্রায় ১ হাজার ফুট নীচে নামছে তারা। পানি সংগ্রহের কষ্টের দৃশ্য দেখতে আমি তাদের সাথে নীচে নামি।
পাহাড়ের চড়াই উৎরায় পেরেয়ি কুয়ায় পৌঁছে দেখা যায়, পাহাড়ের নীচ থেকে ঝিরি ও কুয়া থেকে জল সংগ্রহ করছে তারা। পাথুরের ছোট ছোট গর্তে জমা হয় পানি। এসব পাতিল ও বোতলে ভরছে গ্রামের নারীরা। এসময় বাবলি ত্রিপুরা জানান, বছরের এই সময়ে (শুষ্ক মৌসুম) পানির তীব্র কষ্ট হয়। গ্রামের মেয়েরা সকাল ও বিকেলে পানি সংগ্রহ করে। পানি নিয়ে উঁচু পাহাড়ে উঠতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু বিকল্প কোন উপায় নেই। কুয়ায় পর্যাপ্ত পানি জমা পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়। সামনের দিনগুলিতে পানির জন্য আরো কষ্ট হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য গণেশ চন্দ্র ত্রিপুরা জানান, আমরা এলাকায় ১১টি পাড়ায় প্রায় দুই হাজার মানুষের বসবাস। এখানে বেশির ভাগ এলাকায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। ঝিরি ও ঝর্ণা থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কয়েকবার গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও পাথুরে পাহাড়ের কারণে নলকূপ স্থাপন সম্ভব হয়নি। এসব এলাকায় ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে কুয়া থেকে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাড়া সংলগ্ন এলাকায় পানির ট্যাংক বসিয়ে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখলে এই দুর্ভোগ দূর হবে।
খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজির উদ্দিন জানান, সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর প্রতিটি ইউনিয়নের ২৬টি পয়েন্টে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী ৫ বছর এই প্রকল্প চলমান থাকবে। এতে করে পানির সংকট মিটে যাবে। কোথাও যদি পাথুরে পাহাড়ের কারণে নলকূপ স্থাপনে বিঘ্ন ঘটে সেক্ষেত্রে স্থান পরিবর্তন করে নলকূপ স্থাপন করা হবে। এছাড়া আরো একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহের কাজ চলমান রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ১২ হাজার সিএনজি অটোরিকশা স্ক্র্যাপিং
পরবর্তী নিবন্ধগণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার : প্রধানমন্ত্রী