লোহাগাড়ায় একেবারে পানি শূন্য হয়ে পড়েছে হাঙর ও টংকাবতী খাল। এতে হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে রোপিত বোরো ধান ও রবিশষ্যের ফলন নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবার আশংকা রয়েছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়া ও রাবার ড্যাম এলাকায় খালে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় কমে গেছে পানি ধারণ ক্ষমতা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এমন বৃষ্টি বোরো ধানের ফলনের জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জানা যায়, প্রায় এক সপ্তাহ যাবত উপজেলার কলাউজান–চরম্বা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী টংকাবতী খালে ও পদুয়া ইউনিয়নের ফরিয়াদিরকুল এলাকায় হাঙর খালের উপর থাকা র্যাবার ড্যামের উজানে একেবারে পানি শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে কৃষকরা বোরো ধান ও রবিশষ্য ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না। ফলে বোরো ও রবিশষ্য চাষাবাদ ব্যাহত হবার পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন কৃষকরা। ক্ষতির চিন্তা করে কৃষকরা বৃষ্টির জন্য আকাশ পানে চেয়ে আছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস ও রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর টংকাবতী খালের রাবার ড্যামের আওতায় ১৪টি স্কিমের অধীনে হাজারেরও অধিক কৃষক ৭শ হেক্টর জমিতে বোরো ধান ও ৫০ হেক্টর জমিতে রবিশস্য চাষাবাদ করেছেন। এছাড়া পদুয়া ফরিয়াদিকুল হাঙর খালের রাবার ড্যামের আওতায় ৩টি স্কিমের অধীনে প্রায় সাড়ে ৮ শতাধিক কৃষক ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান ও ৫০ হেক্টর জমিতে রবিশস্য চাষাবাদ করেছেন। বোরো ধানের ভালো ফলনের জন্য এ সময় পানি খুবই প্রয়োজন। কিন্তু খালে পানি না থাকায় কৃষকরা বোরো ও শষ্য ক্ষেতে পানি দিতে পারছেন না। অন্য বছর এ সময়ে কয়েক দফা বৃষ্টি হতো। এ বছর এখনো পর্যন্ত বৃষ্টির কোনো দেখা মেলেনি।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, খালের রাবার ড্যাম দুটির উজানে পানি শূন্য হয়ে বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। কড়া রোদে খালের মধ্যে অনেক জায়গায় পানির অভাবে মাটির ফাঁটল দেখা দিয়েছে। খালে রাবার ড্যামের উজানেও নেই পানি, ভাটিতেও নেই। ফলে প্রয়োজনীয় পানির অভাবে এলাকার কৃষকেরা সেচের পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন। ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। সেচের পানির অভাবে অনেক কৃষক চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি এলাকায় নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এতে পানীয়জলেরও অভাব দেখা দিয়েছে।
পদুয়া ফরিয়াদিকুল হাঙর খালের রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটিতে দায়িত্বরত কৃষক মো. জিয়াবুল হক জানান, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় বোরো ধানের ফলন হবার আগেই রাবার ড্যাম দিয়ে খালে জমানো পানি শুকিয়ে গেছে। এছাড়া খালের উজানেও পানি নেই। উজানে সামান্য পানি পাওয়া গেলেও চাষাবাদের তুলানায় তা একেবারে অপ্রতুল। সমন্বয় করে ব্যবহার করায় এতোদিন পানি পাওয়া গেছে। অন্যথায় অনেক আগেই পানি শেষ যেতো। তিনি বলেন, আমি নিজেও ৬ কানি জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছি। পানির অভাবে সেচ দিতে না পারলে ধানের ফলন অর্ধেকও পাওয়া যাবে না। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছে।
টংকাবতী খালের রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রিটন কান্তি বিশ্বাস জানান, টংকাবতী খালের রাবার ড্যাম দিয়ে জমানো পানি নিয়ে অনেক কৃষক চাষাবাদ করেন। রাবার ড্যাম এলাকায় পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা অর্ধেকের চেয়ে কমে গেছে। পর্যাপ্ত পানি ধারণ করতে না পারায় ও দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদ শেষ হবার অনেক আগেই পানি শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া খালের উজানে ব্যাপক তামাক চাষাবাদ হয়েছে। তামাক ক্ষেতে ব্যাপক পানির প্রয়োজন হয়। উজানে তামাক ক্ষেতে সেচ দিতে গিয়ে ভাটির দিকে পানি প্রয়োজনের তুলনায় কম আসতে পারে। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের আগাম বোরো চাষাবাদ করার জন্য মাইকিং করা হয়েছিল। কিন্তু কৃষক তা কর্ণপাত করেননি। পানির অভাবে এবার কৃষকরা বোরো ও রবিশষ্য চাষে ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী শফিউল ইসলাম জানান, টংকাবতী ও হাঙর খালের রাবার ড্যামকে ঘিরে বিপুল পরিমাণ বোরো চাষবাদ হয়েছে। কিন্তু রাবার ড্যাম এলাকায় খালে পানি শূন্য হয়ে যাওয়ায় কয়েকশ হেক্টরের বেশি জমির চাষ প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। বোরো ধান চাষের এ সময়ে ভালো ফলনের জন্য জমিতে পানি থাকা খুবই জরুরি। পানির সংকট কাটানো সম্ভব না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। তবে সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে।