সাম্প্রতিক সময়ে সর্বত্রই বিরাজ করছে চরম অবস্থা। এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি আমরা। সারাদেশে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ এ সংকট দেখা দিচ্ছে। উৎপাদের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেক দেশে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে দেশের ১৫২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ১১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট। বর্তমানে এই কেন্দ্রগুলো থেকে এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বৃদ্ধির কারণে সরবরাহ বন্ধ রাখায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও। ফলে তীব্র লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে নানারকম সংকট তৈরি হচ্ছে। শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কর্মজীবীদের কাজ করতে ধীরগতি হচ্ছে। তীব্র লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন- যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সেটির ভার সবাইকে ভাগ করে নিতে হবে। সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। আমরা যদি মিতব্যয়ী হই এবং নিজেরা নিজেদের সঞ্চয় বাড়াতে পারি তাহলে যে কোন সমস্যা মোকাবিলা করতে পারব। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, বিপণিবিতান, কমিউনিটি সেন্টার, অফিস-আদালত এবং বাড়িঘর আলোকসজ্জা না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আমাদের জাতীয় সম্পদের মধ্যে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাত। আমরা জানি, প্রতিটি উপাদান খুবই প্রয়োজনীয়। বলা যায়, বিদ্যুৎ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলোর একটি না থাকলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবন অচল হয়ে পড়ে। আধুনিক জীবন যাপনের জন্য পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ভূমিকা অপরিসীম। অথচ এসব সম্পদ আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে অপচয় করে থাকি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অজ্ঞতা ও অসচেতনতাই এর মূল কারণ। ছোট ছোট অপচয় থেকেই আমরা প্রতিদিন নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের অভাবে হরহামেশা সমস্যায় পড়তে হয়। লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। বিদ্যুতের অপচয়ের ফলেই এসবের সৃষ্টি হয়। বিদ্যুতের অপচয় রোধ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘স্বাধীন দেশের সবাই সবকিছু স্বাধীনভাবে ব্যবহার করেন। তবে দেশটা যেহেতু নিজেদের, সে ক্ষেত্রে দেশের সম্পদের ব্যবহার সঠিকভাবেই করা উচিত। বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের জীবন স্থবির হয়ে পড়বে। আমরা যদি সচেতন হই, তাহলে এর অপচয় রোধ করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন। বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো রকম রাজনীতি করা উচিত নয়। বিদ্যুৎ না থাকলে আমাদের অর্থনীতি একদিন মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে।’ তাঁরা বিদ্যুতের অপচয় রোধের কিছু উপায় জানান। যেমন : প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাতি ও পাখা ছেড়ে রাখা উচিত নয়। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় খেয়াল করুন, তা ছাড়া আছে কি না। এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করা যেতে পারে। বিনা প্রয়োজনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিঙ সামগ্রী ব্যবহার করা উচিত নয়। শিল্প-কারখানাগুলো রাতের বেলা চালু রাখলে বিদ্যুৎ কম খরচ হয়। শপিং মলগুলোয় আলোকসজ্জার ব্যবহার কমাতে হবে। কারণ, এসব আলোকসজ্জায় অনেক বিদ্যুৎ অপচয় হয়। বৈদ্যুতিক বিল সঠিক সময়ে দিতে হবে। এ ছাড়া রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো অনেক সময় দিনের বেলাও জ্বলে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যারা বাসায় থাকেন তাদের বেশি সচেতন হওয়া উচিত। অনুরূপভাবে গ্যাস আমাদের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আমরা নানাভাবে এর অপচয় করে থাকি। গ্যাসের অপচয় রোধ না করা গেলে একসময় হয়তো এটি ফুরিয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, গ্যাসের ব্যবহারকারী যদি এ ব্যাপারে সচেতন হয়, তাহলেই এর অপচয় রোধ করা যাবে। কর্তৃপক্ষকেই এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শাস্তির বিধান থাকলে জনগণের নীতি ঠিক থাকবে। তারা সঠিকভাবে গ্যাস ব্যবহার করবে। গ্যাসের অপচয় রোধে তিনি বেশ কিছু পরামর্শ দেন। তাঁদের মতে- বাড়িতে মিটার বসানো যেতে পারে। প্রিপেইড মিটারও হতে পারে। তবে এসব কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মধ্যে যেন দুর্নীতি ঢুকে না পড়ে, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে। অনুমোদন ছাড়া চুলা ব্যবহার করা যাবে না। অনুমোদন নিলেও জানতে হবে গ্রাহক কতটি চুলা ব্যবহার করছে। অপ্রয়োজনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা ঠিক নয়। অবৈধভাবে চুলা ব্যবহারকারীকে শাস্তি প্রদান করা উচিত। সচেতনতাই আমাদের সম্পদের অপচয় রোধ করতে পারে। সবারই এ ব্যাপারে লক্ষ রাখা উচিত। সবার আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপচয় রোধ করা সম্ভব।