দেশের নৌ–পথ ভিত্তিক পণ্য পরিবহনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে এবং বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে গতকাল একদিনেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো। গতকাল (বুধবার) ঢাকাস্থ বিআইডব্লিউটিএ এর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পৃথক দুই অনুষ্ঠানে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেনার টার্মিনাল (আইসিটি) একক ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করবে। অপরদিকে লালদিয়া–২ অঞ্চলে বিশেষায়িত হেভি লিফট কার্গো জেটি নির্মাণের কাজ নৌবাহিনী পরিচালনা করবে। গতকাল উপরোক্ত দুইটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ন্ত্রণাধীন পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেনার টার্মিনাল ও তৎসংলগ্ন ৪৮ একর ২৪ শতাংশ জায়গা প্রচলিত পদ্ধতিতে লিজ নিয়ে টার্মিনালটি পুরোপুরি এককভাবেই পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আগামী ১ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০৩৫ পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে ১০ বছরের জন্য চবককে লাইসেন্স প্রদান করা হবে, যা বাৎসরিক নবায়নের ভিত্তিতে চলবে। তবে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী মোট ৩০ বছর কার্যকর থাকবে চুক্তির মেয়াদ। উপরোক্ত সময়কালে বন্দর কর্তৃপক্ষ পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনাল এককভাবে পরিচালনা করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৯৫ শতাংশ মালামাল বর্তমানে সড়ক পথে পরিবাহিত হয়, ফলে সড়কের উপর অতিরিক্ত চাপ এবং পরিবহন ব্যয় বাড়ছে। পানগাঁও আইসিটিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় এককভাবে চালনার মাধ্যমে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী নদীপথ পরিবহন জনপ্রিয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এখানে একটি ফ্রি কটন জোন গড়ে তোলা হবে, যা ব্যবসা–বাণিজ্যের সমপ্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
একইসাথে গতকাল দুপুরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের “পশ্চাদ সুবিধাসহ হেভি লিফট কার্গো জেটি নির্মাণ প্রকল্প” এর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি “অর্পিত ক্রয়কার্য হিসেবে” বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। জেটিটি লালদিয়া–২ অঞ্চলে নির্মিত হবে এবং এর দৈর্ঘ্য হবে ২৪০ মিটার।
চট্টগ্রাম বন্দরে এতদিন ভারী শিল্পজাত কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিশেষায়িত কোনো জেটি ছিল না। এনসিটি বার্থ নং–৫ সাময়িকভাবে ব্যবহার করা হলেও সেটি মূলত কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নির্মিত হয়েছিল। নতুন জেটিটি প্রতি বর্গমিটারে ৫ টন ভার বহন করতে সক্ষম হবে, যেখানে এনসিটি বার্থ নং–৫ এ এই সক্ষমতা ছিল মাত্র ৩ টন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন্দর ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে এবং শিল্পোন্নয়নেও গতি আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
গতকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আরিফ আহমেদ মোস্তফা, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পক্ষে রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) আনোয়ার হোসেন এবং চবক সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশীদসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক, উপ–প্রকল্প পরিচালক ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।