পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে এশীয় ব্যবস্থাপনা চান ইউনূস

বোয়াও ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন

| শুক্রবার , ২৮ মার্চ, ২০২৫ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ যে বহু বছর ধরে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের শিকার হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে এশিয়ার দেশগুলোকে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ফেরত আনার একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, দুর্নীতির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতি বছর ১ ট্রিলিয়ন ডলার হারায়, যা তাদের পাওয়া মোট উন্নয়ন সহায়তার বহুগুণ বেশি। এশিয়ার উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ফেরত দেওয়ার জন্য একটি বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। গতকাল বৃহস্পতিবার চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় এই আহ্বান জানান ইউনূস।

পরিবর্তনশীল বিশ্বে এশিয়া : একটি সম্মিলিত ভবিষ্যতের দিকে’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি বলেন, এই ফোরাম এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বহুপাক্ষিকতার অধীনে বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্রতর হচ্ছে। ঋণের বোঝা অসহনীয় হয়ে উঠছে। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হচ্ছে। সম্মিলিত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে বিশ্ব এক ভয়াবহ ঘাটতির মুখোমুখি। এশিয়ার বিশাল জনসংখ্যা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা এবং ৫৫ শতাংশ বৈশ্বিক জিডিপির উৎস এই এশিয়া। তিনি বলেন, এক দশক আগের নীতিনির্ধারণের ধারণাগুলো এখন অপ্রাসঙ্গিক। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। খবর বিডিনিউজের।

২০০৭ সালে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আলোচনা করতে বোয়াও ফোরামে অংশ নেওয়ার কথা স্মরণ করে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এবার তিনি এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসেছেন। আজ আমি এক ভিন্ন ভূমিকায় এখানে উপস্থিত হয়েছি, এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে, যা গত বছরের জুলাইআগস্ট মাসে এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে। বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে কীভাবে জনগণ দমনপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। আমাদের তরুণ ও সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের ভবিষ্যত পুনঃনির্মাণে অসাধারণ দৃঢ়তা ও শক্তি প্রদর্শন করেছে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছি। বিচারবিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, সিভিল প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব সংস্কার বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশের একটি মৌলিক রূপান্তর ঘটবে।

নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এসবের অনেক কিছুই এশীয় অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সম্পর্কিত। বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক টানাপড়েন, এবং বাণিজ্য বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনাগুলো আমাদের এই উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। সুদের হার বৃদ্ধি এবং ঋণ পরিশোধের উচ্চ ব্যয় এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরো গভীর করছে।

বর্তমান বৈশ্বিক সংকটগুলোর মধ্যে যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং অর্থনীতিকে বিঘ্নিত করছে বলে মত দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ফিলিস্তিন সংকট শুধু আরব বা মুসলিমদের সমস্যা নয়, এটি মানবতার সংকট। ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, আর মিয়ানমারের চলমান সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করেছে।

৭ বছরের বেশি সময় ধরে কঙবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকা ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার কারণে বাংলাদেশ যে ক্রমাগত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত চাপে পড়ছে, সে কথাও ইউনূস বলেন। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এশিয়ার দেশগুলোকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা এশিয়ার ভবিষ্যৎ উন্নয়নে চারটি মূল ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানান। সেগুলো হল আর্থিক সহযোগিতা, বাণিজ্য সহযোগিতা, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা, এবং প্রযুক্তি সহযোগিতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধান উপদেষ্টাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারেক রহমান
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬