বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাটা পাহাড়গুলো এখন দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ছে। এতে করে একদিকে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রাণীকুলও সংকটে পড়ছে। বন ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ন্যাড়া পাহাড়ে আগুন দেওয়ার কারণে পশুপাখি, কীটপতঙ্গ বসতি হারায় এবং তাদের ডিম, ছানাগুলো আগুনে অঙ্গার হয়ে যায়। গতকাল রোববার বিকেল তিনটায় দেখা গেছে, লিংক রোড সংলগ্ন জালালাবাদ মৌজার একটি পাহাড় জ্বলছে। এসময় ময়না ফিঙেসহ অসংখ্য পাখি জ্বলন্ত আগুনের চারিদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী কামাল উদ্দিন বলেন, পাহাড়ের উপরে ছোট গাছের ডালে ও ঘাসের মধ্যে অনেক পাখি বাসা বেঁধেছে। ওখানে পাখিরা ডিম পেরেছে। খুব সম্ভবত তাদের বাসা ও ডিমগুলো আগুন থেকে রক্ষা করতেই চেষ্টা করছে। কিন্তু আগুনের কারণে কাছে ভিড়তে পারছে না।
ওই এলাকায় বেড়াতে যাওয়া সোহেল চৌধুরী নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, পাহাড়ের ঘাসগুলো যেভাবে জ্বলছে, তাতে মনে হচ্ছে কেউ কোন পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কাঁচা ঘাসগুলো একদিক থেকে জ্বলছে। আগুনে পুরো পাহাড়টি ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে। ছোট গাছগুলোও পুড়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড হয়ে যাওয়ার পর সড়কের পাশের পাহাড়গুলোতে চোখ পড়েছে পাহাড়খেকোদের। এখন অনেকে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে পাহাড়গুলো কিনে নিচ্ছে। ভূমি অফিসের লোকজন এসব অনিয়মে সহায়তা করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এখানকার পাহাড়ে বড় কোন গাছ নেই। আগুনে পাহাড়ের ছোট ছোট গাছপালা, আগাছা পুড়ে যাওয়ার পর দখলকারীরা কলাগাছ লাগিয়ে দেয়। কোথাও কোথাও টিনের ছাউনি দিয়ে বসতি নির্মাণ করে দখল করছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও দীর্ঘ সময় প্রশাসনের নির্বিকারের কারণে পাহাড়গুলো সহজে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. দানেশ মিয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা ছাত্রদের পড়াই। আগাছা দমন কিংবা অন্য যেকোন কারণেই হোক বন পাহাড়ে আগুন দেওয়া বিপদজনক। পাহাড় কিংবা বনে পশুপাখি বাদেও অনেক কীটপতঙ্গ আছে, যেগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। আগুন দেওয়ার কারণে একদিকে যেমন পশুপাখি তাদের বসতি হারায়, অন্যদিকে তাদের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হয়।