পাঁচ লাখ টাকার প্যাকেজে রোহিঙ্গাদের বিদেশ প্রেরণ

পাসপোর্ট-ভিসা-জাতীয় পরিচয়পত্র-জন্ম নিবন্ধন সব করে দেয় দেশীয় সংঘবদ্ধ চক্র, চার সদস্য গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

পাঁচ লাখ টাকার প্যাকেজে রোহিঙ্গাদের বিদেশ নিয়ে যাচ্ছে এ দেশেরই একটি সংঘবদ্ধ চক্র। রোহিঙ্গাদের কিছুই করতে হয় না। পাসপোর্ট, ভিসা, জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদসবকিছু তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল চক্রের সদস্যদের। রোহিঙ্গাদের কাজ শুধু নির্দিষ্ট সময়ে বিদেশ পাড়ি দেওয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে দুই রোহিঙ্গাকে পাসপোর্টের কাজে ঢাকায় নেওয়ার পথে নগরীর গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের সামনে থেকে চক্রটির চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি পাসপোর্ট ও একটি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চক্রের মূল হোতা সাতকানিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. খসরু পারভেজ (৩৬) ও তার সহযোগী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার মো. তসলিম (৪০), লোহাগাড়ার আধুনগরের মো. ইসমাইল (২০) এবং পটিয়ার আশিয়া এলাকার মো. ফারুক (২৭)। এছাড়া রোহিঙ্গা দুইজন হলেন মো. জাবের (২৫) ও রজি আলম (২৭)

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, কয়েক মাস ধরে তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট/জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছিল। প্রতিটি পাসপোর্ট তৈরিতে ১ লাখ টাকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর জন্য ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে তারা।

মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ আসাদ উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে আসাদ উল্লাহ জেদ্দাগামী একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তার কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট কিভাবে এসেছে, সেটার তদন্তে নামলে এ চক্রের সন্ধান মেলে। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকায় যাওয়ার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাসপোর্ট তৈরির মূলহোতা পারভেজসহ আরও দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পারভেজের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার অপর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি পাসপোর্ট ও একটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে।

উপপুলিশ কমিশনার নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, প্রত্যেক রোহিঙ্গা পাসপোর্ট বানিয়ে সৌদি আরবে চলে যায়। তারা বাংলাদেশে আসার আগে থেকে তাদের পরিচিত অনেকে সৌদি আরবে আছে। তারাই এই রোহিঙ্গাদের সেখানে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করছে। আর এ চক্রটি রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ও সেখানে যেতে যাবতীয় সব ধরনের সহযোগিতা করে।

তিনি আরও বলেন, এ চক্রের বাকি সদস্যরা ঢাকার পাসপোর্ট অফিসের সামনে থাকে। তাদের মাধ্যমেই পাসপোর্ট তৈরি করে। এছাড়া এ চক্র চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করত। এরপর শুধু ওই রোহিঙ্গা নাগরিকদের নাম ঠিক রেখে বাবামা, স্থানের নাম পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতুরস্কে ভূমিকম্পের ১০ দিন পর কিশোরী জীবিত উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধএবার চোখে কালো কাপড় বেঁধে আন্দোলনে চারুকলার শিক্ষার্থীরা