পাঁচ বছরে ৫টি জাহাজ কিনতে চায় বিএসসি

ওয়ান শিপ পলিসি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থাটি

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

রাষ্ট্রায়ত্ত জাহাজ পরিচালনাকারী একমাত্র সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) নিজের টাকায় প্রতিবছর একটি করে জাহাজ কিনতে চায়। এ ব্যাপারে ‘ওয়ান শিপ পলিসি’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসসি। অন্ততঃ আগামী ৫ বছর বিএসসি এই ধারা অব্যাহত রাখতে চায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী শিপিং বাণিজ্যের দারুণ প্রবৃদ্ধির মাঝে ব্যাংকে এফডিআর করে টাকা জমিয়ে না রেখে জাহাজ কেনার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন বিএসসি বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য। আগামী বোর্ড সভায় বিষয়টি সিদ্ধান্ত আকারে আসতে পারে বলেও সূত্র নিশ্চিত করে।

সূত্র জানিয়েছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করা বিএসসি একসময় বেশ জমজমাট অবস্থায় ছিল। সংস্থার বহরে যুক্ত হয়েছিল ৪৪টি জাহাজ। কিন্তু পরবর্তীতে নানামুখি অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে ডুবতে বসেছিল বিএসসি। এক সময় এমন কথাও সংস্থায় প্রচলিত ছিল যে, জাহাজ বিক্রি করে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতার যোগান দিতে হয়। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে এসে সংস্থার বহরে জাহাজের সংখ্যা নেমে আসে মাত্র দুইটিতে। তাও অনেক পুরানো জাহাজ।

পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বিএসসি। চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি জাহাজ কেনা হয়। ২০১৮ সালে তিনটি এবং ২০১৯ সালে তিনটি মিলে ওই ছয়টি জাহাজ নিয়ে বিএসসির বহর উন্নীত হয় ৮টি জাহাজে। ২০২২ সালের ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০২২ সালে বিএসসির বহর আবার ৭টি জাহাজে নেমে আসে। গত বছরের অক্টোবরে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ৩৭ বছরের পুরনো এমটি বাংলার সৌরভ ও এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজ দুটি অগ্নিকাণ্ডে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দুইটি জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে পরবর্তীতে ৫৫ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়া হলে বিএসসিতে জাহাজের বহর নেমে আসে মাত্র ৫টিতে।

মাত্র ৫টি জাহাজ নিয়েও বিএসসি বেশ ভালো ব্যবসা করতে থাকে। সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে, ২০১৮১৯ অর্থবছরে শিপিং করপোরেশনের মুনাফা ছিল মাত্র ১৭ কোটি টাকা। এরপর প্রতিবছরই মুনাফা বেড়েছে। গত অর্থবছরে বিএসসি ৩০৬ কোটি টাকা মুনাফা করে। সাত বছরে মুনাফার এই প্রবৃদ্ধি দেড় হাজার শতাংশেরও বেশি।

মুনাফার এই ধারা ধরে রাখতে বিএসসি চলতি বছর সংস্থার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিজস্ব অর্থায়নে ৯৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুইটি বড় সাইজের নতুন বাল্ক কেরিয়ার কিনেছে। এই দুইটি জাহাজের একটি গত ২৬ অক্টোবর থেকে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে। গতকাল পর্যন্ত জাহাজটির আয় দশ কোটি টাকার বেশি বলে সূত্র জানিয়েছে। অপর জাহাজটিও জানুয়ারি থেকে ভাড়ায় চলাচল শুরু করবে। নতুন জাহাজ দুইটি কিনে বহরে যুক্ত করায় আগামী বছর মুনাফা ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ব্যাংকে টাকা এফডিআর করে রেখে যে লাভ হয় তার থেকে বহু বেশি লাভ জাহাজ পরিচালনায়। তাই আমরা বোর্ড সভায় ওয়ান শিপ পলিসি নিয়ে আলোচনা করেছি। এর অর্থ প্রতিবছর একটি করে জাহাজ। অন্তত আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে আমরা আরো পাঁচটি জাহাজ বহরে যুক্ত করতে চায়। তাহলে আমাদের জাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ১২টিতে। আমাদের মুনাফার প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে যাবে। বিএসসি একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, বিশ্বব্যাপী শিপিং সেক্টরে প্রবৃদ্ধি আশাব্যাঞ্জক। প্রতিদিনই শিপিং বাণিজ্যের পরিধি বাড়ছে, চাহিদা বাড়ছে, প্রয়োজন বাড়ছে। জাহাজের ভাড়া বাড়ছে। ডলারের দাম বাড়ছে। আমরা এ সুযোগগুলো নিয়ে আমাদের শিপিং সেক্টরকে সমৃদ্ধ করতে চাই।

বিএসসির ৫৩ বছরের ইতিহাসে গত অর্থবছরে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করার কথা উল্লেখ করে কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, আমরা এই ধারা ধরে রাখতে চাই। এজন্য ওয়ান শিপ পলিসি দারুণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বিষয়টি বোর্ড সভায় আলোচনা হয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন, আমরা পরবর্তী বোর্ড সভায় বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা করে চূড়ান্ত করবো। মুনাফা ও রাজস্ব বাড়ার ব্যাপারে দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি বড় ব্যাপার বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অতীতে জাহাজগুলো প্রায়ই অলস বসে থাকতো। কিন্তু গত এক বছরে এমন একটি দিনও যায়নি যখন কোনো জাহাজ অলস ছিল। আমরা প্রতিদিনেরই ভাড়া পেয়েছি। আরো জাহাজ কিনতে পারলে আমাদের আয় ও মুনাফা দুইটিই বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ
পরবর্তী নিবন্ধআমাকে মাফ করে দিস বলে স্ত্রীকে ফোন, পরে মিলল যুবকের ঝুলন্ত লাশ