পরিচয় আড়াল করতে ব্যবহার করতেন কখনও ভোলার চরফ্যাশন, কখনও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ কিংবা চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানার ঠিকানা। জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নামের স্থানে নিজের নামে ব্যবহার করতেন। ‘জাহাঙ্গীর আলম’ ও ‘কলগার্ল বয়’ নামে দুটি আইডি থেকে বিভিন্ন রকম টিকটক ভিডিও প্রকাশ করতেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন সময় পেশা বদল করেও ঢাকা-চট্টগ্রামে আত্মগোপনে ছিলেন দীর্ঘ পাঁচ বছর! তবে শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে র্যাবের ফাঁদে ধরা পড়েছেন ছিনতাই করতে গিয়ে মাহেন্দ্র পরিবহনের চালক খুনের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি রনি শিকদার (২০)। গত বুধবার ঢাকার লালবাগ থানার শহীদ নগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রনি শিকদার নগরীর হালিশহরের আব্দুরপাড়া এলাকার আব্দুর রউফ শিকদারের ছেলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনি জানিয়েছেন, গত ২০১৬ সালে আসামি রনি শিকদার ও তার তিন বন্ধু মিলে অসৎভাবে লাভের আশায় গাড়ি ছিনতাইয়ের উদ্দেশে চট্টগ্রাম থেকে খুলনায় ঘুরতে যান। সেখান থেকে আসার সময় ওই বছরের ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পরিকল্পনা করে চার বন্ধু মিলে ৭০০ টাকা চুক্তিতে একটি মাহেন্দ্র গাড়ি ভাড়া নেন। গাড়িতে উঠার পর কিছুদূর যেতেই তারা গাড়িটি ছিনতাই করতে চালককে ভয়ভীতি দেখায়। একপর্যায়ে আসামি রনি শিকদার ও তার বন্ধুরা মিলে টিপ ছুরি দিয়ে চালক রিপনকে উপর্যুপরী আঘাত করে এবং গলার ভেতর ছুরি ঢুকিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। খুলনা নগরীর লবণচরা এলাকায় রাস্তার পাশে চালক রিপনের লাশটি ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার দিকে রওনা হন তারা। কিন্তু গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থানা পুলিশের চেকপোস্টে তাদের গাড়িটিকে সিগন্যাল দেওয়া হয়। এ সময় তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি এবং তাদের কথায় গড়মিল থাকায় পুলিশ সন্দেহ করে। একপর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওই গাড়ির চালক রিপনকে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই করার কথা স্বীকার করেন। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মতে রিপনের লাশটি শনাক্তের পর উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে তাদের চারজনকে ওই হত্যাকান্ড ও গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে খুলনার লবণচরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় খুলনার লবণচরা থানা পুলিশ ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করে। মামলায় ২৩ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ১৫ জন স্বাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে চলতি বছরের ২৯ মার্চ খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
র্যাব জানায়, হত্যাকান্ডের ঘটনায় তারা খুলনার লবণচরা থানা পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আসামি রনি শিকদার ২ বছর জেল খেটে জামিন নিয়ে বের হয়। এরপর তিনি আর কোনো দিন আদালতে হাজিরা দেননি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্নভাবে আত্মগোপনে থাকেন। আসামি রনি শিকদার জামিনে বের হয়ে প্রথমে চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর ও আয়রনম্যানের কাজ করে। এরপর সেখান থেকে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা ও সিএনজি চালানো শুরু করে। সর্বশেষ সে ঢাকার লালবাগ শহিদ নগর এলাকার একটি চুড়ির কারখানায় কাজে নিয়োজিত ছিলো এবং নিয়মিত টিকটক ভিডিও করতো।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার বলেন, আসামি রনি প্রায়ই ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা যাওয়া করতো। এছাড়াও সে মাঝে মাঝে চট্টগ্রামে তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আসতো। সে নিজের আসল পরিচয় গোপন রাখার জন্য বিভিন্ন ঠিকানা প্রকাশ করতো। এছাড়াও সে তার জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের বাবার নামও পরিবর্তন করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামি রনি শিকদারের অবস্থান জানতে পেরে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে র্যাবের সদস্যরা। গত ৫ অক্টোবর ঢাকার লালবাগ থানার শহিদ নগর ১ নম্বর গলি থেকে রনি শিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।












