বাংলাদেশে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হয়, তা বোঝাতে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার প্রসঙ্গ সামনে এনেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকারের যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো অত্যন্ত সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে এবং তাতে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। কেবল বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতপাখার প্রার্থীকে ঘুষি মারার একটি ঘটনা ছিল, যেটি উচিত হয়নি। তারপরও ওই ঘটনাকে বড় করে দেখানো হয়েছে। পশ্চিম বাংলার নির্বাচনে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৩৫ জন নিহত হয়েছে। পরে আরও কয়েকজন হাসপাতালে মারা গেছে। সেই তুলনায় আমাদের নির্বাচনে একটা ঘুষি লেগেছে। আপনিই বিচার করুন আমাদের নির্বাচন কত সুষ্ঠু হয়েছে।
সামসাময়িক বিষয় নিয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি যখন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, গুলশান এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৭ আসনের উপনির্বাচনে তখন ভোটগ্রহণ চলছে। এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম সকালে অভিযোগ করেন, তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাছান মাহমুদ বলেন, কোনো একজন প্রার্থী বললেই তো সেটি সঠিক নয়। সেটি তদন্ত করতে হবে, নির্বাচন কমিশন সেটিকে ভ্যালিডেট করতে হবে। কিছু কিছু প্রার্থী দাঁড়ায় এগুলো বলার জন্য আর প্রচার পাওয়ার জন্য। আর এগুলো বললে একটু প্রচার হয়। যে সমস্ত প্রার্থী বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রার্থী হয়, তাদের উদ্দেশ্য কি নির্বাচিত হওয়া, নাকি প্রচার পাওয়া সেটি একটি বড় প্রশ্ন। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকা–১৭ আসনে সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকা নিয়ে এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যে কোনো দেশে যখন উপনির্বাচন হয়, সেই উপনির্বাচনে ভোটার টার্নআউট কম হয়। এটা আমাদের দেশেও সবসময় হয়ে আসছে। নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে উপনির্বাচন হলে ভোটার টার্নআউট খুবই কম হওয়টিই স্বাভাবিক।
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রার্থী আসছে না কেন–এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে। বিএনপি মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিল ভোট না দেওয়ার জন্য। এরপরেও কোনো কোনো জায়গায় ৫০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। সুতরাং বিএনপি না এলেই যে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না, সেটি যে সঠিক নয় তা প্রমাণ হয়েছে। অবশ্যই বিএনপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে নির্বাচন বা গণতন্ত্র অনেক শক্তিশালী হয়।
আজ মঙ্গলবার বিএনপির পদযাত্রার কর্মসূচি রয়েছে। একই দিন আওয়ামী লীগেরও কর্মসূচি রয়েছে। মুখোমুখি অবস্থানে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে কিনা, তথ্যমন্ত্রীকে সেই প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে তিনি বলেন, কয়দিন আগে দুই দলই দেড় কিলোমিটার দূরত্বে সমাবেশ করেছে, কিছুই হয়নি, সেটি হওয়ার সম্ভবনাও নেই, যদি না বিএনপি মানুষের ওপর হামলা না চালায়।
শান্তিপূর্ণভাবে সভা–সমাবেশ করবে বলে বিএনপি ঘোষণা দিলেও মির্জা ফখরুল রোববার বলেছেন, রাজপথেই ফয়সালা হবে। এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বিএনপি বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে, দেখা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যখন বৈঠক করে, তখন ইইউ রাষ্ট্রদূত স্পষ্টত তাদেরকে বলেছেন, হরতাল, অবরোধ এগুলো গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। তাদের যদি বোধশক্তি থাকে, তাহলে তারা কোনো বিধ্বংসী কর্মসূচির দিকে যাবে না। আর যদি জনগণের কষ্ট সৃষ্টি হয় এমন কোনো বিধ্বংসী কর্মসূচিতে তারা যান, তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না।
হাছান মাহমুদ বলেন, জনগণের যে কোনো কষ্ট সৃষ্টি করে এমন কর্মসূচি যদি তারা ঘোষণা করে বা অতীতের মতো তারা বিভিন্ন সময় যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে, এ বছরও করেছে, সেগুলোর যদি পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করে আমরাও মাঠে থাকব। জনগণকে সাথে নিয়ে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা হবে।
ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এনজিও ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বৈঠকের বিষয়ে এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এরা নাগরিক সমাজের খণ্ডিত অংশ। তারা পুরো নাগরিক সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে না। নাগরিক সমাজ বা সুশীল সমাজ তারা অনেক বড়। যারা সবসময় সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত তারা দেনদরবার করে তাদের সাথে দেখা করেছে। তারা এ কথাগুলো হারহামেশাই বিভিন্ন সভা–সেমিনারে, টকশোতে বা পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বলে আসছে। একই কথাগুলো সেখানেও বলেছে। তারা যেহেতু পুরো নাগরিক সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে না, তাই তাদের বক্তব্য দেশের নাগরিক সমাজের বক্তব্য নয়।
ইইউ ও মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ কিংবা নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান হাছান মাহমুদ। সংবিধানের আলোকে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো প্রমাণ করে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সরকারি দলের তোয়াক্কা করে না। সরকারি দলের তোয়াক্কা যদি করত এবং সরকারকে সমীহ করত তাহলে গাইবান্ধা–৫ আসনের নির্বাচনটা বাতিল করত না।