কুষ্টিয়া থেকে ২০ টি গরু বিক্রির জন্য এনেছেন বেপারি শমসের। সর্বনিম্ন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের গরু আছে তার। চারদিন পেরুলেও একটি গরুও বিক্রি করতে পারেন নি তিনি। আজাদীকে তিনি বলেন, ক্রেতাদের অনেকেই দাম জিজ্ঞেস করে চলে যায়। অনেকে যে দামে কিনতে চায় সে দামে বিক্রি করলে লস হবে। এরপরও আশা করছি সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে যাবে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কোরবানের একদিন–দুইদিন আগেই বিক্রি হয় বেশি। এখন ক্রেতারা দাম আইডিয়া করছেন।
শমসের এর সঙ্গে গতকাল বিকেলে কথা হয় কর্ণফুলী পশুর (নূর নগর হাউজিং এস্টেট) বাজারে। তার সঙ্গে কথা বলার সময় অন্তত ৩০জন লোক সেখানে ছিল যারা শমসের এর গরুগুলো দেখছিল। এ চিত্র থেকে স্পষ্ট গতকাল শুক্রবার কোরবানি পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা–দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। সে তুলনায় বিক্রি তেমন হয়নি।
এবার নগরে স্থায়ী–অস্থায়ী ১০টি পশুর হাট বসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায়। এছাড়া চৌধুরীহাটের পশুর বাজারে আজ থেকে খাস আদায়ের মাধ্যমে হাসিল আদায়ের ঘোষণা দেয় চসিক। ওই হিসেবে ১১টি বাজার বসে চসিকের ব্যবস্থাপনায়। অস্থায়ী বাজারগুলো হচ্ছে– কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট), ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়। স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে– সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।
গতকাল দুটি হাটে সরেজমিন উপস্থিত হয়ে এবং অন্য বাজারগুলোর ইজারাদার ও একাধিক বেপারির সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সবগুলো বাজারের চিত্র প্রায় অভিন্ন। গতকাল প্রচুর ভিড় থাকলেও বিক্রি হয়েছে কম। তাছাড়া অন্যান্যবারের তুলনায় বাজারগুলোতে পশুর সংখ্যাও কম দেখা গেছে। ইজারাদাররা জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেপারি ও খামারীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। বেপারিরা কোরবানি পশু নিয়ে আসছেন। পথে শত শত পশুবাহী ট্রাক আছে। তাছাড়া শেষ দিকে বিক্রি হয় বেশি। আগে–ভাগে আসলে থাকা–খাওয়ার খরচ লাগে। ওটা হিসেব করেও অনেকে দেরিতে আসছেন।
তবে ইতোমধ্যে বাজারগুলোতে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুর, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লাহ, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে গরু এনেছেন বেপারিরা। আছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকে নিয়ে আসা গরুও। স্থানীয় বিভিন্ন খামারে হৃষ্টপুষ্টকৃত প্রচুর গরুও আনা হয়েছে বিক্রির জন্য।
সাগরিকা পশুর বাজারের ইজারাদার এরশাদ মামুন আজাদীকে বলেন, আজ (গতকাল) বিক্রি মোটামুটি হয়েছে, তবে সেটা উল্লেখ করার মত না। তাছাড়া বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা থমকে যায়। আশা করছি ধীরে ধীরে বিক্রি করবে। সাধারণত কোরবানের দুয়েকদিন আগে বিক্রি বেশি হয়।
চতুর্থ দিনেও বাজারে অন্যবারের তুলনায় গরুর সংখ্যা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, গরু আসছে। প্রচুর গরু পথে আছে। আরো ২০০–৪০০ ট্রাক গরু আসবে আমাদের বাজারে। আসলে পরিবহন সমস্যার কারণ গরু নিয়ে আসা বেপারিরা এখনো বাজারে এসে পৌঁছায়নি। এবার কিন্তু পরিবহন ভাড়া বেশি। ২০ হাজার টাকার ভাড়া ৪০ হাজার টাকা হয়ে গেছে। গরুর সংখ্যার চয়ে পরিবহনের সংখ্যা কম। বেপারিকে গরু গাড়িতে তোলার আগে ভাড়ার টাকা ম্যানেজ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে তাদের আসতে একটু সময় লাগছে। তবে রওয়ানা দিলে আসতে সময় লাগছে না। কারণ রাস্তায় জ্যাম নাই এবং প্রশাসনেরও যথেষ্ট সহযোগিতা আছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে বৃষ্টি হওয়ায় বেকায়দায় পড়েন ক্রেতারা। গতকাল বিবির হাট বাজারে কথা হয় মোবিন নামে একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মূলত গরু দেখার জন্য আসলাম। এবার গরুর দাম কেমন তার ধারণা নিচ্ছি। গরু কিনব আরো পরে। তবে এর মধ্যেও সুযোগ পেলে কিনে ফেলব।
সাগরিকা থেকে দেড় লাখ টাকায় গরু কিনেছেন নজরুল। তিনি বলেন, আত্মীয়ের বাড়িতে দেয়ার জন্য কিনেছি। নিজের জন্য আরো পড়ে কিনব।