পলোগ্রাউন্ড মাঠকে নিয়ে শীঘ্রই মেগা প্রকল্প

এই মাঠ খেলা ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না : ফজলে করিম, এক বছরের মধ্যে চট্টগ্রামের ১৯১ ইউনিয়নে একটি করে খেলার মাঠ নির্মাণ করা হবে : ডিসি

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ২৩ জুন, ২০২৩ at ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের খেলার মাঠগুলোকে কেবলই খেলাধুলার জন্য ব্যবহারের একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তারই অংশ হিসেবে এরই মধ্যে তিনি নগরীর আউটার স্টেডিয়ামকে অবৈধ দখলমুক্ত করেছেন। এখন আউটার স্টেডিয়ামের উন্নয়ন পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। নগরীর আরেকটি খেলাধুলার তীর্থ ভূমি বলা চলে রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠকে। কিন্তু দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই মাঠ থেকে খেলাধুলা বলতে গেলে নির্বাসিত। কারণ এই মাঠটি এখন পুরোটাই মেলার দখলে। বছরের বেশিরভাগ সময় এই মাঠে মেলা বসে। তবে সবচাইতে কষ্টের বিষয় হচ্ছে মেলা একমাস হলেও সে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি এবং মেলা শেষে স্থাপনা সরাতে লাগে আরো তিন থেকে চার মাস। ফলে দুই মেলাতেই বছর পার। তবে এবার সে অবস্থার অবসান চান জাতীয় সংসদ সদস্য এবং রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন এই পলোগ্রাউন্ড মাঠ আর খেলা ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। গতকাল জেলা প্রশাসন আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আন্তঃ কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, শীঘ্রই এই পলোগ্রাউন্ড মাঠকে ঘিরে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক খেলার মাঠে খেলাধুলাকে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। যা বেশ প্রশংসিত হয়েছে। তারই আহ্বানের প্রেক্ষিতে পলোগ্রাউন্ড মাঠের বিষয়টি আমি সংসদীয় কমিটির সভায় উত্থাপন করি। আমি সেখানে বলেছি খেলার মাঠ যেন অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া না হয়। ফজলে করিম চৌধুরী নগরীর সিআরবি এলাকাকে একটি নান্দনিক জায়গায় পরিণত করেছেন। এক সময় মানুষ যেখানে ভয়ে হাঁটতোনা সেখানে এখন গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ বসে আড্ডা দেয়। সে রকম দৃষ্টিনন্দন করে পলোগ্রাউন্ড মাঠটাকেও গড়ে তুলতে চান তিনি।

তিনি জানান, এই রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ডকে নিয়ে একটি মেগা প্রকল্প শীঘ্রই প্রণয়ন করা হবে। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন একটি প্রকল্পের রূপরেখা দাঁড় করালে সেটা নিয়ে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা চালিয়ে যাব যাতে মাঠটি কেবলই খেলোয়াড়দের জন্য থাকে। পলোগ্রাউন্ড মাঠের চারপাশে ওয়াকওয়ে বা অ্যাথলেটিঙ ট্র্যাক করার কথাও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। আর সেটাকে সমর্থন করে ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, এই মাঠটাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে মানুষ রাতেও হাঁটতে পারে একেবারে নির্ভয়ে এবং নির্বিঘ্নে। মানুষ কাজ কর্ম সেরে সন্ধ্যা কিংবা রাতে একটু হাঁটবে আর খেলোয়াড়রা মাঠে খেলবে। এমন দৃশ্যটাই দেখতে চান তিনি। পুরো মাঠটাকে সংষ্কার করে একাধিক মাঠে পরিণত করার পাশাপাশি মাঠের উত্তর পাশে গ্যালারী নির্মাণের সম্ভাব্যতার কথাও জানান তিনি। যেহেতু মাঠটি লম্বা আকারের সেহেতু মাঠের উত্তর পাশেই হতে পারে গ্যালারী। আর মাঠের যে স্থানে এখন প্যাভেলিয়ন ভবন রয়েছে সেটিকে ভেঙ্গে আরো কিভাবে সুন্দর এবং দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা যায় সে ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা করা আহ্বান জানান তিনি। এই মাঠটাকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যাতে এটা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি।

ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ক্রীড়া পাগল একজন মানুষ। তিনি চান দেশের ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা করুক। আর সে জন্য দেশব্যাপী শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। তার আমলে যদি এই পলোগ্রান্ডের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি মাঠকে খেলার মাঠে পরিণত করা না যায় তাহলে সেটা হবে আমাদের হতাশার। তিনি শীঘ্রই এই মাঠটাকে ঘিরে একটি মহা পরিকল্পনা প্রণয়নের অনুরোধ জানান। যাতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই মাঠটি আবার খেলোয়াড়দের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারি। তিনি জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে বলে, আপনি যে কাজ শুরু করেছেন তা বেশ প্রশংসনীয়। আপনি এগিয়ে যান আমি সব সময় সাথে থাকব। তরুণ সমাজকে অবশ্যই খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। আর সে জন্য পলোগ্রাউন্ড মাঠকে পুরোপুরি খেলাধুলার উপযোগী করে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। আর সে জরুরি কাজটি আমরা জরুরী ভিত্তিতেই করতে চাই।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, এরই মধ্যে চট্টগ্রামের ১৯১টি ইউনিয়নে একটি করে খেলার মাঠ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে খেলার মাঠ তৈরি করে দিতে চাই। ইতিমধ্যে আমাদের উপজেলার নির্বাহী অফিসারগণ এবং এসি (ল্যান্ড)গণ মাঠের জন্য জমি ও জায়গা চিহ্নিত করেছেন। এখন ধাপে ধাপে সেখানে ইউনিয়ন স্পোর্টস এবং কালচার সেন্টার নির্মাণ করা হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে ১৯১টি মাঠে খেলাধুলা চালু হবে। এতে চট্টগ্রামবাসীর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উদ্যোগ। যাতে তরুণযুবকরা মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের মতো পথে না হেঁটে খেলাধুলার পথে হাঁটে। তিনি বলেন, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম সংলগ্ন মাঠের একাংশকে কেবলই মহিলাদের জন্য পৃথক একটি মাঠে পরিণত করতে চান তিনি। আর সে কাজে জেলা ক্রীড়া সংস্থাও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন এই শহরের সবগুলো খেলার মাঠকে পুনরায় খেলাধুলার কাজে ব্যবহারের মতো করে তৈরি করার সময় চলে এসেছে। সবাইকে মিলে এই কাজটি আমাদের করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজমে উঠতে শুরু করেছে দশ পশুর হাট
পরবর্তী নিবন্ধভোট গ্রহণে ৪ হাজার কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি