পলিথিন বন্ধে কঠোর হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ লক্ষ্যে ওয়ার্ড ভিত্তিক কাউন্সিলরদের সাহায্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। ওয়ার্ড ভিত্তিক পলিথিন কারখানার তালিকা তৈরি করে জমা দেয়া হবে পরিবেশ অধিদপ্তরে। পাশাপাশি চসিক, সিএমপি, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ৪১ ওয়ার্ডে প্রচারণা চালানো হবে। এরপর শুরু হবে পলিথিন বিরোধী অভিযান।
‘পলিথিন মুক্ত চট্টগ্রাম’ শীর্ষক এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল সকালে টাইগারপাসস্থ চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। চসিকের পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের সভাপতিত্বে সভায় বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত ১৬ জুন নগরের বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়েছিল। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘খালে ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিন ফেলা রোধকল্পে সিটি কর্পোরেশন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’ পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার বিভাগ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেয় সিটি কর্পোরেশনকে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে দাবি করা হচ্ছিল, খাল পরিষ্কার করার কিছুদিনের মধ্যে আবারো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পলিথিনকে দায়ি করা হয়। এ অবস্থায় পলিথিন রোধে চসিকের নেতৃত্বে গতকাল বৈঠকে বসেন সেবা সংস্থাগুলো।
সভায় মেয়র বলেন, পলিথিন আমাদের জন্য অভিশাপ। পরিবেশ রক্ষা ও নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়ার্ডভিত্তিক কোন পলিথিন কারখানা আছে কিনা তা চিহ্নিত করে তা বন্ধ করতে হবে। এজন্য কাউন্সিলরগণ স্ব স্ব ওয়ার্ডে কোন পলিথিন কারখানা থাকলে তার তালিকা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে জমা দেবেন। পলিথিনমুক্ত চট্টগ্রাম অসম্ভব ব্যাপার নয়। নগরবাসী ও ব্যবসায়ীদের পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন, পলিথিন বন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করা। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন পাহাড় কাটা বন্ধ করা, পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পাইলিং এর মাটি নালা-খালে ফেলা বন্ধ করা। এ বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে সেবা সংস্থাগুলোকে।
পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালক মো. নুরুল্লাহ নুরী বলেন, আমরা সাধারণত পাঁচ ধরনের পলিথিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। মোটা পলিথিন ব্যবহার করা গেলেও নাগরিকদের যত্রতত্র না ফেলার জন্য সচেতন করতে হবে। পলিথিন ডাম্পিং করা ঠিক হবে না। তিনি চসিককে আবাসিক গৃহ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সবুজ ও লাল রংয়ের বিন সরবরাহের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে আবর্জনার পাশাপাশি পলিথিনও আলাদা করা যাবে। তিনি বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। নগরীর কিছু প্রভাবশালী মহল রাতের অন্ধকারে পাহাড় কাটেন, এতে পলিথিনের মত পাহাড়ের বালিও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।
অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক আ.স.ম জামসেদ খোন্দকার সমন্বিত উদ্যোগের পাশাপাশি পলিথিনের বিকল্প টিস্যু পেপারের থলে ব্যবহারে ব্যবস্থা নেয়া যায় বলে উল্লেখ করেন।
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে পলিথিন বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সেবাসংস্থাগুলোকে নিয়ে একদিন পলিথিন মুক্ত ও আবর্জনা পরিষ্কারের কর্মসূচি গ্রহণ এবং পলিথিন বন্ধে জরিমানা ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব করেন তিনি।
চসিক সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এস.এম মোস্তাইন হোসেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী ।