১৯৬০ সালে কর্ণফুলী নদীর পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই অংশে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার ফলে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। যদিও এই হ্রদ কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনই নয়, ভূমিকা রেখে আসছে পাহাড়ি জনপদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে। রাঙামাটির পাহাড়ে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য, বাঁশ ও কাঠের সহজলভ্য পরিবহনে ভূমিকা রাখছে কাপ্তাই হ্রদ। এছাড়াও এই হ্রদ এখন দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের আবাসস্থলও। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি কমতে থাকায় জেলার ছয়টি উপজেলা বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও নানিয়ারচরের সঙ্গে যোগাযোগের নৌ–পথে পলি জমে ব্যাহত হয় নৌযান চলাচল। হ্রদযোগে কৃষি ও মৌসুমি ফল পরিবহনে ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় চাষি ও বাসিন্দারা। কাপ্তাই হ্রদের নৌপথ খনন নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে দাবি উঠলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কাপ্তাই হ্রদের নৌ–পথে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে তলদেশ। ফলে শুষ্ক মৌসুমে নৌযান চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে বিপর্যয় নেমে আসে। পরিবহনের অভাবে নষ্ট হয় এসব অঞ্চলে উৎপাদিত নানা কৃষি পণ্য। এছাড়াও চাষাবাদের জন্য সেচ সংকটে পড়তে হয় চাষিদেরও। বর্তমানে পানিস্বল্পতার কারণে কাপ্তাই হ্রদের ছয়টি নৌ–রুটের মধ্যে তিনটিতে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। বাকি ৩টি পথও যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
উন্নয়ন কর্মী সুশীল বিকাশ চাকমা বলেন, শুষ্ক মৌসুম এলে কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে নৌ–পথে চলাচলে ভোগান্তি বাড়ে। জুরাছড়ি উপজেলায় লঞ্চ চলাচল সবার আগে বন্ধ হয়ে যায়। মূলত শলক নদের গভীরতা না থাকায় লঞ্চ বা বোট চলাচল করতে পারে না। আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি। উপজেলাটির সঙ্গে রাঙামাটি সদরের সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র উপায় হলো নৌ–পধ। তবে বিকল্প পথে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা হয়ে সড়ক পথে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই বন্ধ রয়েছে বাঘাইছড়ির মারিশ্যার সঙ্গে রাঙামাটির লঞ্চ যাতায়াত। বছরের ৬ থেকে ৭ মাস এই রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে এই উপজেলার মানুষকে খাগড়াছড়ি হয়ে সড়ক পথে ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাঙামাটি শহরে যেতে হয়। অথবা মোটরসাইকেলে লংগদু এসে তারপর লঞ্চে করে রাঙামাটি যেতে হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলার স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ি জেলা শহরে যাতায়াত করতে গিয়ে। গাড়িতে যেতে হলে খাগড়াছড়ি ঘুরে যেতে হয় রাঙ্গামাটি। আর লেকে পানি না থাকায় লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযান চলাচলও বন্ধ থাকা বছরের অর্ধেকের বেশি সময়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন যাত্রী সংস্থার রাঙামাটি জোনের চেয়ারম্যান ও লঞ্চ মালিক মঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, রাঙামাটির ছয়টি উপজেলার সঙ্গে কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে লঞ্চের যাতায়াত রয়েছে। তবে বর্তমানে তিনটি উপজেলায় লঞ্চ যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। বাকি তিনটিতেও যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে। এসব উপজেলায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করতে বর্তমানে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানি নেই বললে চলে। দীর্ঘদিন ধরে কাপ্তাই হ্রদে খনন করার বিষয়ে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খনন ছাড়া এ সংকটের সমাধান দেখছি না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাঙামাটি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, কাপ্তাই হ্রদের নৌ–পথ খনন নিয়ে আমরা একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) জমা দিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। আশা করছি, কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং এর বিষয়ে একটা পদক্ষেপ নেয়া হবে। এবং শীঘ্রই এ সংকটের সমাধান হবে।