পলান সরকার (১৯২১–২০১৯)। সমাজকর্মী, জ্ঞানের ফেরিওয়ালা একজন আলোকিত মানুষ। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে সমাজসেবায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে। পলান সরকার ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ই সেপ্টেম্বর নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পলান সরকারের জন্ম নাম ছিল হারেজ উদ্দিন সরকার। তবে জন্মের পর থেকেই মা ‘পলান’ নামে ডাকতেন। মাত্র পাঁচ মাস বয়সে তার বাবা হায়াত উল্লাহ সরকার মৃত্যুবরণ করেন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে পলান সরকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টানেন। কিন্তু বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন। পলান সরকারের নানা ময়েন উদ্দিন সরকার স্থানীয় ছোট জমিদার ছিলেন। নানার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ৪০ বিঘা সম্পত্তির মালিক হন। পলান সরকার রাজশাহী জেলার ২০ টি গ্রামজুড়ে গড়ে তুলেছেন অভিনব শিক্ষা আন্দোলন। নিজের টাকায় বই কিনে তিনি পড়তে দেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষদের। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে বেরিয়ে পডতেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে একেকদিন যেতেন একেক গ্রামে। বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দেন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিচিত ‘বইওয়ালা দাদুভাই’ হিসেবে। ১৯৯০ সাল থেকে স্থানীয় একটি স্কুলে মেধাতালিকায় প্রথম দশটি স্থান অর্জনকারীদের বই উপহার দিতেন পলান সরকার। পরবর্তীতে তিনি স্কুলকেন্দ্রিক বই বিতরণের প্রথা ভেঙে বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দেয়া এবং ফেরত নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি তিনি বইও উপহার দেন। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী জেলা পরিষদ তার বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে সামাজসেবায় অবদানের জন্য রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক লাভ করেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ লা মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।