দেশের পর্যটন শিল্পের অবস্থা নাজুক। গত কয়েক দিনে কারফিউ ও কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। দৈনিক আজাদীতে গত ২৬ জুলাই ‘পর্যটনে আবারও অশনি সংকেত’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজারেও কারফিউ চলছে। কারফিউতে আটকা পড়েছিল কয়েক হাজার পর্যটক। ইতোমধ্যে প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কক্সবাজার ছেড়েছে ৩ হাজার পর্যটক। এছাড়া বিশেষ পাস নিয়েও নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরেছে আরও কয়েক হাজার পর্যটক। যার ফলে পর্যটনে আবারও অশনি সংকেত বিরাজ করছে। এ নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝে ভর করেছে দুশ্চিন্তা। সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। অলস সময় পার করছেন কিটকট, জেটস্কি, বীচ বাইক, ঘোড়া চালক, ঝিনুকসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। গুটি কয়েক পর্যটক বালিয়াড়িতে অবস্থান করছে। কেউ কেউ সমুদ্র স্নানে ব্যস্ত। স্থানীয় কিছু লোকজন সৈকতের অবস্থা দেখার জন্য বেরিয়েছেন। পর্যটক না থাকায় অলস সময় পার করছেন হোটেল কর্মচারীরা। অধিকাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়েছে কর্মচারীদের। সি ভিউ রিসোর্টের এক কর্মচারী বলেন, অবসর সময় কাটাচ্ছি। কারফিউর কারণে পর্যটকদের আনাগোনা নেই। ফলে অলস সময় কাটাচ্ছি।
এছাড়া কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের অগ্রগতিতে প্রধান অন্তরায় হলো এলাকার রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা। শহরের অভ্যন্তরের সড়কগুলোর দুর্বিষহ অবস্থা এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে দুর্গন্ধ ছড়ানো ময়লার স্তূপ পুরো নগরীর পরিবেশ বিপন্ন করে তুলেছে। ইতোপূর্বে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পে প্রত্যাশার কাছাকাছি অগ্রগতি ঘটলেও একটি বিশ্বমানের পর্যটন নগরী হিসাবে বিকশিত হওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে রয়েছে রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক দশা। বিমানে এক ঘণ্টারও কম সময়ে রাজধানী থেকে কক্সবাজারে পৌঁছা যায়। কিন্তু স্থলপথে আসা যাওয়া এখনও বেশ ভোগান্তির। সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত। বিমানে দৈনিক হাজারের কম মানুষ আসা যাওয়া করতে পারেন। বাকিদের আসতে হয় স্থলপথেই। পথে পথে রাস্তাঘাটে রয়েছে নানা দুর্ভোগ। পর্যটন শহরের রাস্তাঘাটও বড় দুর্ভোগের। মেরিন ড্রাইভের প্রবেশ মুখ কলাতলীতে প্রায় ১ কি.মি ভাঙা রাস্তার কারণে কক্সবাজার–টেকনাফ সমুদ্র তীরবর্তী ৮০ কি.মি দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের সৌন্দর্য ম্লান। শহরের অন্যান্য অংশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাস্তারও করুণ দশা। এছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে খোলা ডাস্টবিন ও যত্রতত্র দুর্গন্ধ ছড়ানো ময়লার স্তুপ পর্যটন শহরের সাথে মানানসই নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের পর্যটন শিল্পের যে নাজুক পরিস্থিতি, তাতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প যে কী অবস্থায় আছে, তা সহজে অনুমেয়। তবু আমরা শিল্পের বিকাশের ব্যাপারে আশাবাদী। এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশের পর্যটন শিল্পের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও। আমরা যদি বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করতে চাই, তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ‘কক্সবাজার’–এর নামটি সর্বাগ্রে চলে আসে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি টেকনাফ সৈকত, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, উখিয়া সৈকত, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক প্রভৃতি নামও পর্যটন শিল্পের খাতায় চলে আসবে।
আমাদের কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হলেও যাতায়াত ব্যবস্থার নানা সমস্যার কারণে আজও পর্যটন শিল্প হিসেবে বিকাশ লাভ করেনি। ইদানীংকালে সেখানে হোটেল শিল্প বিকাশ লাভ করলেও ‘পর্যটন কর্পোরেশন’–এর নিয়ন্ত্রণাধীন মোটেলগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কক্সবাজারস্থ মোটেল গুলোতে ছাড়পোকা ও তেলাপোকার অবাধ বিচরণ বলে অভিযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের অগ্রগতি যে হচ্ছে না, তা নয়। তবে পরিবেশের বিষয়টি নজরে রেখেই উন্নয়ন করতে হবে। পরিবেশ ঠিক না থাকলে পর্যটকরা স্বস্তি পাবেন না। কক্সবাজারের পাহাড়, সমুদ্র সৈকত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা ও সামগ্রিক পরিবেশ। সেটা পর্যাপ্ত না হলে মানুষ এখানে কেন আসবে? তাই রাস্তাঘাটের আরো উন্নয়ন ঘটিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতরকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলে এ শিল্পকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন। পর্যটনশিল্পের উন্নতির জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনসহ পর্যটন ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ জরুরি বলে তাঁরা মনে করেন।