পর্যটকে চাঙা পাহাড়ের অর্থনীতি

বান্দরবান প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ লকডাউনের পর শীতে পর্যটকের আগমনে চাঙা হচ্ছে পাহাড়ের অর্থর্নীতি। বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় ব্যস্ত বান্দরবানে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও। শীত যেন আশির্বাদ হয়ে এসেছে পর্যটক নির্ভর পাহাড়ের মানুষগুলোর জন্য। শীতের পরশে শিশির ভেজা সকালে এবং পড়ন্ত বিকালে পর্যটন স্পটগুলোতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের আনাগোনা বেড়ে বদলাতে শুরু করেছে দর্শণীয় স্থানগুলোর দৃশ্যপট। শীতে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান জেলায় বেড়ানোর জন্য প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে পাহাড়ে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ছুটির দিন মানেই পর্যটকের বাড়তি চাপ। গতকালও বান্দরবানের অন্যতম দর্শণীয় স্থান পাহাড়ের চূড়ায় সরকারি অর্থায়নে গড়ে তোলা ট্যুরিষ্ট স্পট নীলাচল, বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়, সেনানিয়ন্ত্রিত নীলগিরি রিসোর্ট, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, শৈল প্রপাত, স্বর্ণ মন্দির, নীলদিগন্ত দর্শণীয় স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসু মানুষদের। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত ছিলো জেলার অন্যতম পর্যটন স্পটগুলো।
অপরদিকে শীত মৌসুমই হলো পাহাড়ের অরণ্যের জেলা বান্দরবানের দুর্গমাঞ্চলগুলোর দর্শণীয় স্থানগুলো ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। প্রকৃতির নির্মল ছোয়া পেতে পার্বত্য এই জনপদের পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভ্রমন পিপাসুরা। শীতের সকালে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা বান্দরবানের পাহাড়গুলো দূর থেকে দেখেই মনে হতে পারে যেন বরফের ৭ম পৃষ্ঠার ৮ম কলাম
কোনো স্তুপ। প্রকৃতি যেন সবটুকু উজাড় করে দিয়ে পেখম মেলে বসে আছে সৌন্দর্য বিকাশে। যান্ত্রিক জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার ছক থেকে বেরিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে এখন ভিড় জমাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলার পর্যটকেরা।
অন্যদিকে পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এখানকার পাহাড়ি-বাঙালি মানুষগুলোর রুটি-রুজিও। পর্যটকের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসা বাণিজ্য আবাসিক হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, হস্তশিল্পের তৈরি শোপিস, কোমর তাঁতের কাপড়, পাহাড়ে উৎপাাদিক ফলমূল বিক্রি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পর্যটকবাহী ট্যুরিষ্ট গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবহণ ব্যবসায়ও প্রাণ ফিরেছে।
বেড়াতে আসা পর্যটক ওয়াহিদ মিজান, অপূর্ব, রেশমী ফারহান বলেন, দীর্ঘদিন ঘরবন্দি জীবন থেকে বেড়িয়ে সবুজ পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি অন্যরকম। চারদিকে সবুজের ছড়াছড়ি, যেন চোখ জুড়ানো ভালোলাগা। চিম্বুক-নীলগিরি সড়কে রাস্তার দু’পাশে পাহাড়িদের মাচাং দোকানের টাটকা ফলমূল খাওয়ার মজায় আলাদা। আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির বান্দরবানের জেলা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত এই অঞ্চলের অর্থনীতিও। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলে দেয়া হয়েছে পর্যটন স্পট ও আবাসিক হোটেল, রেষ্টুরেন্ট। শীতের আগমনে আসতে শুরু করেছে দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা। পর্যটকদের আনাগোনায় চাঙ্গা হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বাণিজ্যও। বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় ব্যস্ত এখন ব্যবসায়ীরাও।
স্থানীয় পাহাড়িদের ঐতিহ্যগত পোষাক-হস্তশিল্প ব্যবসায়ী এসানু মারমা বলেন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর তৈরি কোমর তাঁতের পোষাক এবং বাঁশ, কাঠের তৈরির হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রধান ক্রেতা হচ্ছে পর্যটক। বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশী পর্যটকেরাই এসব জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যায়। শীতের আগমনে বেড়াতে আসছে পর্যটকেরাও। বেচাবিক্রিও হচ্ছে হস্তশিল্পের জিনিসপত্রের। ট্যুরিস্ট জীপ গাড়ি শ্রমিক সমিতির নেতা মোহাম্মদ কামাল বলেন, পর্যটকবাহী দু’শতাধিকের বেশি গাড়ি রয়েছে বান্দরবান সদরে। গাড়িগুলোর সঙ্গে জড়িত কয়েক শতাধিক শ্রমিক এবং মালিকও। শীতে পর্যটকেরা বেড়াতে আসায় হাসি ফুটেছে শ্রমিকদের মুখেও। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং পর্যটক হয়রানীর কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও শীতে পর্যটকের আগমন বেড়েছে দর্শণীয় স্থানগুলোতে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই এই অঞ্চলে। পর্যটকদের সুবিধার্থে দর্শণীয় স্থানগুলো রক্ষণাবেক্ষণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও চলমান রয়েছে জেলায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলীর ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধসাকিবকে হত্যার হুমকি যুবককে গ্রেফতারে অভিযান