অবরোধ কর্মসূচিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান জেলা পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে। ধস নেমেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবধরনের ব্যবসা–বাণিজ্যে। পর্যটনের ভরা মৌসুমে রাজনৈতিক এমন অস্থিরতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলার পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির চাকাও। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অবরোধ কর্মসূচির কারণে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ফাঁকা জেলা সদরের সবগুলো আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং সরকারি বেসরকারি গেস্টহাউজগুলো। জেলা শহরের হিলবার্ড মোড়স্থ ট্যুরিস্ট স্টেশনে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে জিপ ও খোলা ছাদের গাড়িগুলো। জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিকলেক এবং থানচিতে তমাতুঙ্গী, বড়পাথর, রেমাক্রী, নাফাকুম, অমিয়কুম, আলীকদমের দামতুয়া ঝর্ণা, ডিমপাহাড়সহ দর্শণীয় স্থানগুলো সবই ফাঁকা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুরো জেলাই পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে।
ট্যুরিস্ট গাড়ি শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল বলেন, এখানে তিন শতাধিকের মত ট্যুরিস্ট গাড়িতে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। এরা পর্যটকের উপর নির্ভরশীল। হঠাৎ অবরোধে পর্যটক না আসায় চালক–শ্রমিকেরা অলস সময় কাটাচ্ছে। অনেকে ঠিকমত দুবেলা খেতে পর্যন্ত পারছে না।
পর্যটন ব্যবসায়ী নীলাম্বরী রিসোর্টের মালিক সাইদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় পর্যটন শিল্পে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে না হতেই ফের রাজনৈতিক অস্থিরতায় থমকে গেছে পর্যটকদের আনাগোনা। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
স্থানীয় নীলাচলের কাপড়ের নারী ব্যবসায়ী প্রীতি বম ও মালসম বম বলেন, পর্যটক না থাকায় বেচাবিক্রি একদমই কম। বিক্রি না হওয়ায় উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ করে দিয়েছি। কোমর তাঁত কাপড়ের দোকানদার এবং উৎপাদনকারী সবাই নারী। পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসা–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের নারীরা। এ ব্যবসার মাধ্যমেই তাদের সংসারের খরচ ও সন্তানদের লেখাপড়া চলে। ব্যবসা–বাণিজ্য খুবই মন্দা হওয়ায় দুঃখ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
আবাসিক হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলা সদরে অবস্থিত অধিকাংশ হোটেল মালিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হোটেল ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। পর্যটক না থাকায় লোনের কিস্তি চালাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। অনেকে স্টাফ ছাঁটাই শুরু করেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ স্বপন আইচ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। অবরোধের কারণে পর্যটকের সংখ্যা কম। তবে একদম ফাঁকা নয়, স্থানীয় ও আশপাশের ভ্রমণকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটন স্পটগুলোতে। জেলার বাহিরের ট্যুরিস্টরাও টুকটাক আসছে গাড়ি নিয়ে।