গেল বছরের অক্টোবর থেকে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে দৈন্যদশা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের আগে বিএনপির হরতাল–অবরোধে শত কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের। ডিসেম্বরে বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু নির্বাচনের পর আবারও পর্যটক খরা দেখা দিয়েছে সমুদ্র শহরে। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলেছে ব্যবসায়ীদের। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে কক্সবাজারে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও রামু বৌদ্ধমন্দিরে অগ্নিসংযোগ, নারায়ণগঞ্জ থেকে কক্সবাজারগামী একটি বাসে টাইম বোমা উদ্ধারসহ নানা ঘটনায় পর্যটকদের মাঝে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। নির্বাচন শেষ হলেও যার রেশ কাটেনি এখনও।
বৃহস্পতিবার সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, কিছু সংখ্যক স্থানীয় ছাড়া সেই অর্থে তেমন পর্যটক নেই কোথাও। হোটেল–মোটেল, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ ও দোকানপাটগুলোও প্রায় খালি। একই অবস্থা শামুক–ঝিনুক, জুয়েলারি, শুঁটকিসহ পর্যটনপণ্যের দোকানগুলোতে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী সকাল থেকে দোকান খুলে বসে থাকেন। কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। খালি পড়ে আছে অধিকাংশ চেয়ার–ছাতা (কিটকট)। অলস সময় পার করছেন বিভিন্ন ধরনের বাইক, হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক রহিম বলেন, কক্সবাজারে আসতে ভয় করছিল। কারণ নির্বাচনী আতংক এখনো বিরাজ করছে। তারপরও ভয়কে জয় করে চলে আসলাম। কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক সাফিন চৌধুরী বলেন, স্ত্রী বায়না ধরলো কক্সবাজারে আসার। তাই স্ত্রীর কথা রাখতে চলে আসলাম আতংকের মাঝেও। তবে সুনসান নীরবতায় ভালোই লাগছে। ঝিনুক ছাতা মার্কেটের ব্যবসায়ী জসিম বলেন, নির্বাচনের আগে পর্যটকের যেমন আনাগোনা কম ছিল, তেমনি নির্বাচনের পরেও একেবারে কমে গেল পর্যটক। আমরা খুব কষ্টে ধার দেনা করে দিন কাটাচ্ছি। সুগন্ধা ড্রাগন মার্কেটের ব্যবসায়ী সরওয়ার জানান, পর্যটন মৌসুমকে ঘিরে ব্যবসায়ে নতুন মালামাল আনা হয়েছে। কিন্তু পর্যটক না থাকায় সবকিছু ক্ষতির মুখে পড়েছে। এমন অবস্থা থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ট্রেনে আগুন, কক্সবাজারগামী বাসে টাইম বোমা উদ্ধার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডসহ যে নাশকতা চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে তার ফলে পর্যটকরা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। কক্সবাজার হোটেল–মোটেলগুলোতে ১০% এর চেয়ে কম রুম বুকিং রয়েছে। যা পর্যটন শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। আশা করছি আগামী ১৫ জানুয়ারির পর নির্বাচনী আতংক কাটলে পর্যটকরা কক্সবাজারে আসবে।
কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভরা মৌসুমেও ৯০ শতাংশ হোটেল–মোটেল ও গেস্টহাউসের কক্ষ খালি। করোনা মহামারীর ক্ষতি এখনো ব্যবসায়ীরা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এই অবস্থায় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিরাপত্তার অভাবে মানুষ ঘুরতে আসছে না। তাতে কক্সবাজারের পর্যটকসংশ্লিষ্ট ব্যবসা–বাণিজ্য থমকে গেছে। হোটেল, রেস্তোরাঁসহ পর্যটনের অন্যান্য খাতে দৈনিক ১৫–২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।