পরীর পাহাড়ের অন্য রূপ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৬ জুলাই, ২০২১ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

এমন দিন কখনো দেখিনি। কখনো দেখতে হবে ভাবিনি। কোনো হাঁক-ডাক নেই। নেই কোনো ব্যস্ততা। সাইরেন বাজিয়ে পুলিশের গাড়ি বা প্রিজন ভ্যানও ঢুকছে না। এ যেন কল্পনার পাহাড়।
এসব কথা বললেন মো. আসলাম। তিনি আদালত পাড়ায় জিনিজপত্র বিক্রি করছেন দীর্ঘ দিন ধরে। গতকাল সোমবার দুপুরে আদালত পাড়া তথা পরীর পাহাড়ের মুখে তার সাথে কথা হয়। পঞ্চাশোর্ধ আসলাম বললেন, তখন আমার বয়স ছিল ১৮ বছর। পরিবারে অভাব। পড়ালেখা তেমন করতে পারিনি। জীবিকার তাড়নায় এখানে চলে আসি। প্রথমে ঝালমুড়ি, লেবু ও পেয়ারা বিক্রি করি। পরে আইনজীবীদের টাই ও কোট। মাঝে নানারকম জিনিসপত্রও ফেরি করেছি।
করোনা নিয়ন্ত্রণে চলছে কঠোর লকডাউন। এর মাঝে আসলাম প্রতিদিন একবার হলেও পরীর পাহাড়ে আসেন। বাসায় ভালো লাগে না। এখানেই কাটিয়েছেন জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময়। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি নদীর ওপারে, চরপাথরঘাটা এলাকায়। কোতোয়ালী এলাকার একটি গলিতে ভাড়ায় থাকি। পাহাড়ে যাতে সহজে ও তাড়াতাড়ি আসা যায় তার জন্য কাছাকাছি বাসা নিয়েছি।
আসলাম বলেন, লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকায় জীবনের চাকা বন্ধ হয়ে গেছে। যা রোজগার করতাম তা দিয়ে সংসার চালাতাম। কোনো সঞ্চয় কখনো করিনি। এখন খুব কষ্টে আছি। এক টাকাও আয় নেই। মহামারি আমার খুব ক্ষতি করে দিল। আসলাম একা নন, তার মতো অনেকেই পরীর পাহাড়ের এমন রূপ কখনো দেখেননি। হয়তো ভাবেননি, এমন দিন দেখতে হবে। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, আদালত পাড়ার প্রবেশ মুখ থেকে শুরু করে উপর পর্যন্ত মানুষের কোনো জটলা নেই। নেই কোনো হকার। দোকানপাট সব বন্ধ। আদালতের কক্ষ থেকে শুরু করে জেলা, নগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার রুমগুলোতে ঝুলছে তালা। এছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা রেজিস্ট্রি অফিস, আইনজীবী ভবন; কোথাও নেই প্রাণচাঞ্চল্য।
পুলিশ বলছে, লকডাউনে অন্য সবকিছুর মতো পরীর পাহাড় তথা আদালত পাড়ার কার্যক্রমও সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। তবে ধৃত আসামিদের জন্য কয়েকটি কোর্ট খোলা (জেলার জন্য একটি, নগরীর জন্য একটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) রয়েছে। প্রতিদিন যেসব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয় তাদেরকে এখানে উঠানো হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনবজাতককে পাশে না পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের আহাজারি
পরবর্তী নিবন্ধঢাকা গিয়েই টিকা নিতে হবে সৌদি-কুয়েতগামী কর্মীদের?