পরীক্ষায় বসতে পারেনি ১৩ পরীক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ

উখিয়ার হলদিয়াপালং বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১১ এপ্রিল, ২০২৫ at ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়াপালং আদর্শ বিদ্যাপীঠের ১৩ পরীক্ষার্থী গতকাল শুরু হওয়া ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বসতে পারেনি। তাদের অভিযোগবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রবেশপত্র না পাওয়ায় তারা পরীক্ষা দিতে পারেনি। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন, সড়ক অবরোধ এবং বিদ্যালয়ে ভাঙচুর করেছে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকস্বজনরা। এই ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুসকে আটক করা হয়েছে। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফ হোসাইন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভুক্তভোগী ১৩ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা সাংবাদিকদের জানান, তারা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতো যথাসময়ে রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ফরম পূরণের টাকা পরিশোধ করেছেন। টাকা পরিশোধ করেও তাদের ফরম পূরণ করা হয়নি। কিন্তু বিষয়টি তারা জানতেন না। পরীক্ষার কয়েকদিন আগে প্রবেশপত্র না পেয়ে শিক্ষার্থীরা হৈচৈ করলে পরীক্ষার দিন সকালে তাদের হাতে প্রবেশপত্র দেবেন বলে প্রধান শিক্ষক প্রতিশ্রুতি দেন। সে মোতাবেক ১৩ পরীক্ষার্থী সকালে এসে দেখেন বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে! দিশেহারা হয়ে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েন ১৩ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

স্থানীয়রা জানান, পরীক্ষায় বসতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এক পর্যায়ে তারা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং ভাঙচুর চালান। একই সাথে প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে যোগ দেন পরীক্ষার্থীদের স্বজন ও স্থানীয় লোকজন। ফলে প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে টেকনাফকক্সবাজার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নুর আলম বলেন, ‘আমার মেয়ের ফরম পূরণের টাকাও দিয়েছি। সকালে প্রবেশপত্র দেওয়ার কথা। এখানে এসে দেখা যায় বিদ্যালয়ে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছেন শিক্ষকরা।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান, উখিয়ার মরিচ্যা হলদিয়াপালং আদর্শ বিদ্যানিকেতনের ১৩ জন শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র না পেয়ে পরীক্ষা দিতে পারছেন নাএমন অভিযোগ পাই। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে। পরে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি তারা বোর্ডের ফরমও পূরণ করেনি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, হলদিয়াপালং আদর্শ বিদ্যাপীঠ এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে একাডেমিক স্বীকৃতি পায়নি। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রুমখা পালং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ের টেস্ট পরীক্ষায় তাদের অকৃতকার্য ঘোষণা করা হয়। এ কারণে তারা এসএসসি পরীক্ষার ফরমও পূরণ করেনি। তারা প্রধান শিক্ষক ও অন্য এক দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এই সমস্যার বিষয়টি আগে জানানো হলে সমাধান করা যেত। তারপরও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের যাতে ক্ষতি না হয় এ ব্যাপারে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবেন মোটামুটি আশ্বস্ত করেছেন। বাকিটা পরে দেখা যাবে।’

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘আটক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও প্রতারণা অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মতে তার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভুক্তভোগী এক অভিভাবক বাদি হয়ে রাতেই (গতকাল) মামলাটি দায়ের করবেন বলে জানান ওসি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাক-বাজেট আলোচনায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ১১৪ প্রস্তাবনা
পরবর্তী নিবন্ধভাসানচর কার? জানা যাবে ১৫ দিনের মধ্যে