হাত পা না থাকলেও লেখাপড়ায় অদম্য আগ্রহী প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন অবশেষে পৌঁছে গেল এইচএসসি পরীক্ষার ফাইনাল পর্যন্ত। আজ অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন। শরীরের অবিচ্ছেদ্য ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হাত–পা চারটির কোনোটিই না থাকলেও শিক্ষা অর্জনে তাতে কোনো বাঁধ সাধতে পারেনি অদম্য সাহসী মনোবলের অধিকারী প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনকে। অনেক চড়াই উতরাই ও প্রতিকূল পরিবেশ পেরিয়ে চট্টগ্রামের বাকলিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়ে অবশেষে আজ পরীক্ষা দিচ্ছে সালাহ উদ্দিন। বিশেষ শরীর নিয়ে জন্ম নেয়া সালাহ উদ্দিন মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা গ্রামের দিনমজুর হতদরিদ্র মো. জালাল ও আয়েশা বেগম দম্পতির ছেলে। দুই ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে পঞ্চম সন্তান সালাহ উদ্দিন।
পায়ের স্থানে আছে শুধুমাত্র পা সদৃশ খাটো বিকল অঙ্গে দুটি আঙ্গুল। শরীরের অক্ষমতাকে পেছনে ফেলে প্রতিবন্ধিত্বকে হার মানিয়ে কোমরের নিচের অংশে গজিয়ে উঠা পা সদৃশ একটি বিশেষ পায়ের সেই দুটি আঙ্গুল দিয়ে লিখে সে জেএসসিতে জিপিএ ৩.৪২ পেয়ে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে সে অর্জন করে ২.০০ জিপিএ।
এবার উচ্চশিক্ষার প্রবল স্পৃহা নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে ভর্তির সুযোগ সন্ধান করছিল সে। গত ১২ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘সেই দুটি আঙ্গুল নিয়ে সালাহ উদ্দিনের এসএসসি জয়’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সালাহ উদ্দিন জানান, ‘আজাদীর সেই প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার খবর পেয়ে বাকলিয়া সরকারি কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জসিম উদ্দিন খান স্যার আমার খোঁজখবর নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। মূলত অধ্যক্ষ স্যারের বদান্যতায় আমি একটি সরকারি কলেজে প্রতিবন্ধী কোটায় বিনা খরচে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করি। আমার কলেজের সকল স্যারদের আন্তরিক ও মানবিক সহযোগিতায় আমি আমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। অবশেষে আমি এবার এসএসসি ফাইনাল পরীক্ষার দিতে পারছি। চট্টগ্রাম কলেজের একাডেমিক ভবনে আমার পরীক্ষার হল। আমি বর্তমানে রাহাত্তারপুল চান্দা পুকুরপাড় এলাকায় আমার মা ও এক বোনসহ ভাড়া বাসায় অবস্থান করছি। সেখান থেকেই পরীক্ষা দিতে যাব।’